কোনটা বিজেপির “নাগরিক মোয়া”? বাংলার মানুষকে জানালেন মমতা

।। প্রথম কলকাতা ।।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন অর্থাৎ সিএএ নিয়ে দেশবাসী দেখেছে কিভাবে বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। দিল্লির শাহীনবাগে দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম সম্প্রদায়ের মহিলারা অবস্থান-বিক্ষোভ করেছেন। তাতে সামিল হয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যের সব ধর্মের মানুষজন। সেই আন্দোলনের রেশ প্রবলভাবে এসে পড়ে পশ্চিমবঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আইনের বিরোধিতা করে পথে নেমেছিলেন। উল্টোদিকে বিজেপির দাবি, এই আইনের ফলে পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ মতুয়া এবং নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষজন নাগরিকত্বের অধিকার পাবেন। সোমবার নদিয়ার রানাঘাটে জনসভা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। সেখান থেকে এই ইস্যুতে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেছেন তিনি। সিএএ নিয়ে তিনি বিজেপিকে তোপ দেগে বলেন,’ বিজেপির নাগরিক মোয়া-বিল এসেছে।
১৯৭১ সালের পর থেকে যারা পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন তারা সবাই নাগরিক। আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আপনাদের বলছি, আপনারা ইতিমধ্যেই নাগরিকত্ব পেয়ে গিয়েছেন। নতুন করে আপনাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে বলে বিজেপি যা প্রচার করতে চাইছে, সেটা পুরোপুরি মিথ্যা কথা। ওদের কথায় ভুলবেন না। আমি আবারও বলছি, বাংলায় সিএএ, এনআরসি, এনপিআর চালু করতে দেব না। বিজেপি যতই চেষ্টা করুক, সেটা তারা করতে পারবে না। আপনাদের যদি কেউ তাড়াতে আসে, তবে তাদের ঘাড় ধরে বার করে দিন।” মুখ্যমন্ত্রী এভাবেই সিএএ কে নাগরিক মোয়া বিল বলে কটাক্ষ করেছেন। এদিন যেখানে মুখ্যমন্ত্রী জনসভা করেছেন, সেখানে বিপুল সংখ্যক মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। গত লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট কেন্দ্রে তৃণমূল পরাজিত হয়।
এই কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রচুর মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ যেখানে বাস করেন সেই বনগাঁ কেন্দ্রেও বিজেপি জয়লাভ করে। দীর্ঘদিন ধরে মতুয়া ভোট তৃণমূলের সঙ্গেই ছিল। কিন্তু বিজেপি যবে থেকে প্রচার করা শুরু করেছে তারা ক্ষমতায় আসার পর মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেবে, তখন থেকেই পালাবদল হয়। মতুয়া ভোটের সিংহভাগ চলে যায় বিজেপির দিকে। সেই কারণে বিষয়টি নিয়ে আজ মমতা রানাঘাটের জনসভা থেকে বিশেষ বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মতুয়া এবং নমঃশূদ্র সম্প্রদায়কে। তিনি বলেন, আপনারা সবাই নাগরিক। আপনাদের জন্য রাজ্য সরকার অনেক কাজ করেছে। মতুয়া এবং নমঃশূদ্রদের জন্য রাজ্য সরকার উন্নয়ন বোর্ড তৈরি করে দিয়েছে। নদিয়াতে ৫০০০ উদ্বাস্তু পরিবারকে জমির পাট্টা প্রদান করা হবে।
আরো পড়ুন : আর ব্যাকগিয়ার নয়, লুক ফরোয়ার্ড, কামব্যাক করে তৃণমূলকে ‘সোনার বাংলা’- তোপ শোভনের
এখানে তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস এর স্ত্রীকে প্রার্থী করেছিলাম। কিন্তু সে জিততে পারিনি। তবে যিনি জিতেছেন তাঁর কথা আমি নিজের মুখে বলতে চাই না। কি করে বেড়াচ্ছেন সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এভাবেই রানাঘাটের সভা মঞ্চ থেকে বিজেপিকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য রাজ্যের অন্তত আশিটি বিধানসভা কেন্দ্রে কমবেশি মতুয়াদের একটা প্রভাব রয়েছে ফলাফলের ওপর। তাই মতুয়া ভোটকে টার্গেট করেছে বিজেপি এবং তৃণমূল যুযুধান দু’পক্ষই। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন করোনা টিকা শুরু হওয়ার পর তাদের নাগরিকত্ব প্রদান করার জন্য সিএএ আইন লাগু করা হবে এই রাজ্যে।
অর্থাৎ এখনই আইনটি লাগু হচ্ছে না রাজ্যে, বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর তীব্র ক্ষোভ দেখান বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। কারণ মতুয়া সমাজের প্রতিনিধি শান্তনু নির্বাচনের আগে প্রচার করেছিলেন বিজেপির ক্ষমতায় আসলে এই আইন শীঘ্র লাগু হবে বাংলায়। তাতে নাগরিকত্ব পাবে মতুয়ারা। যে দাবি তাঁরা করে আসছেন দশকের পর দশক ধরে। তাই বিধানসভা নির্বাচনের আগে মতুয়া ভোট এবং সিএএ আইন বেশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতিতে। সেই প্রসঙ্গে মমতা আজ রানাঘাটের সভায় পরিষ্কার বার্তা দিলেন মতুয়াদের। বোঝাতে চাইলেন তাঁরা সবাই নাগরিক আছেন। নির্বাচনের আগে বিষয়টি কোন দিকে মোড় নেয় সেটাই এখন দেখার।