Firefly: মিট মিট আলো জ্বালা জোনাকিরা কোথায় হারিয়ে গেল? যত কথা তাদের নিয়ে

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Firefly: আচ্ছা জানতে ইচ্ছে করেনা মিটমিট করে আলো জ্বেলে ঘুরে বেড়াতো যে জোনাকিরা তারা হারিয়ে গেল কোথায়? জোনাকিদের আলো জ্বলে ওঠে কীভাবে? আলো জ্বালাতে গিয়ে কি পুড়ে যায় জোনাকিরা? ব্যাপারটা ভীষণ আজব তাই না! কিন্তু আজকাল আর জোনাকি দেখা যায়না কেন? কোথায় গিয়েছে জোনাকিরা? কোন জোনাকি আলো জ্বালে? পুরুষ নাকি স্ত্রী? এই আলো জ্বলার পেছনেও রয়েছে দারুণ ইন্টারেস্টিং রহস্য। আপনি কী কখনও ভেবে দেখেছেন সেভাবে? আজ জোনাকির ইতিকথা থাকবে আপনার জন্য।

 

জোনাকি সত্যিই এক রহস্যময় প্রাণী। সাগরের তলদেশে এমন অনেক প্রাণী রয়েছে যারা আলো জ্বালাতে সক্ষম। তবে স্থলভাগে এই ক্ষমতা রয়েছে কেবলমাত্র জোনাকিরই।
প্রকৃতির কী অদ্ভুত সৃষ্টি তাই না! কিন্তু লক্ষ্য করেছেন কি, জোনাকি আজকাল সেভাবে দেখা যায়না।

 

গবেষণা বলছে, অন্যান্যদের মত জোনাকিও আজ বিলুপ্ত প্রায়। শুধু শহরেই নয়, গ্রামে গঞ্জেও আর সেভাবে জোনাকির দেখা নেই। সন্ধ্যা নামলেই আলোর মশাল জ্বেলে জোনাকিরা আর আসেনা। নগরায়ণই কি তার কারণ? গবেষণা তো তাই বলছে। কৃত্রিম আলোর দাপট বাঁচতে দিচ্ছেনা জোনাকিদের। জমিতে সার, কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জোনাকির প্রাণ। বায়ুদূষণ, বাসস্থানের অভাবে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে জোনাকিরা।

 

আসলে আমরা নিজেরা আধুনিক হতে গিয়ে তাদের বেঁচে থাকার পরিবেশটাই নষ্ট করে ফেলেছি। জঙ্গল কেটে উঁচু উঁচু ইমারত বানাচ্ছি। এইসব নানা কারণে জোনাকির অস্তিত্ব আজ সংকটে। আচ্ছা কখনও ভেবে দেখেছেন এই জোনাকি আলো জ্বালায় কীভাবে? কেনই বা আলো জ্বালায় তারা? এর নেপথ্যের গল্পটা শুনলে কিছুটা অবাকই হবেন।

 

বিজ্ঞান বলছে, জোনাকির এই আলো জৈবপ্রভা নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়। যা এককথায় একটি কেমিক্যাল রিয়েকশন। এই রিয়েকশনটি ঘটে তাদের দেহের অভ্যন্তরেই। পেটের পেছনের অংশে একটি নির্দিষ্ট কোষে থাকে থাকে দুই ধরণের রাসায়নিক পদার্থ, লুসিফেরাস ও লুসিফেরিন। এই লুসিফেরাস অক্সিজেনের উপস্থিতিতে লুসিফেরিনের সাথে বিক্রিয়া করে তৈরি করে আলো। কিন্তু প্রশ্ন আসবে, ঐ তাপে জোনাকি পুড়ে যায়না কেন?

 

আমরা জানি যে, যখনই কোনও বস্তু থেকে আলো উৎপন্ন হয় তখনই সেখান থেকে উৎপন্ন হয় তাপ। এটা হয় যখন কোনও তড়িৎ শক্তি থেকে আলোক শক্তি তৈরি হয় তখন। তবে জোনাকির ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু ভিন্ন। জোনাকির আলোক শক্তি উৎপন্ন হয় রাসায়নিক শক্তি থেকে। আর প্রায় পুরো রাসায়নিক শক্তিই আলোক শক্তি তৈরি করে। এখানে তাপশক্তি উৎপন্ন হওয়ার কোনও অবকাশই নেই। যে কারণে বিজ্ঞানের ভাষায় জোনাকির আলো কে বলা হয় ‘কোল্ড লাইট’ বা “ঠান্ডা আলো”। তাই আলো দেওয়ার পরেও জোনাকি পুড়ে ছাই হয়ে যায়না।

 

শুনে অবাক হবেন যে, জোনাকি কিন্তু পথ দেখানোর জন্য আলো জ্বালেনা। শুনলে চমকে উঠবেন যে, এই আলো হচ্ছে জোনাকির ভাষা। মূলত আত্মরক্ষা এবং প্রেমিকাকে সঙ্কেত পাঠানোর জন্যই পুরুষ জোনাকিরা এই আলো জ্বেলে থাকে। জোনাকির আলো কিন্তু একটানা জ্বলেনা। বরং মিটমিট করে জ্বলে আর নেভে। এটা আসলে তাদের সিগন্যাল। পুরুষ জোনাকিরা উড়তে উড়তে আলো জ্বালায়। স্ত্রী জোনাকিকে সিগন্যাল পাঠায় তারা‌। ওদিকে স্ত্রীরাও অপেক্ষা করে সঙ্কেতের।

 

সঙ্কেত পাওয়া মাত্রই সাড়া দেয় স্ত্রী জোনাকিগুলি। এরপরই তাদের মিলন হয় এবং প্রজনন ঘটে। প্রশ্ন আসতে পারে, এত এত জোনাকির মধ্যে স্ত্রীরা সঠিক সঙ্গী কিভাবে বেছে নেয়? কী বলুন তো, আমার আপনার চোখে সব জোনাকির আলো এক মনে হলেও, বাস্তবে কিন্তু প্রতিটা জোনাকির সঙ্কেতের ধরণ আলাদা। স্ত্রী জোনাকির যে সঙ্কেতটা পছন্দ হয়, ঠিক সেই পুরুষটাকে খুঁজে বের করে। এমনকি ভিন্ন প্রজাতির জোনাকিকেও সহজেই চিনতে পারে তারা। জোনাকিরা একই প্রজাতি ছাড়া ভিন্ন প্রজাতির জোনাকির সাথেও মিলন ঘটায়না। ব্যাপারটা ভীষণ অদ্ভুত তাই না? তবে দুঃখের বিষয় হল, আজকাল আর সেই জোনাকি নেই। বলা ভালো আমরা নিজেরাই হারিয়ে ফেলেছি জোনাকিদের।

https://fb.watch/sr_rR0PQ_6/

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version