৭৫ মিনিটের বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কী জানালেন রাজ্যপাল?

।। প্রথম কলকাতা ।।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করতে আজ সকালেই দিল্লি উড়ে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক করেন তাঁরা। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি অমিত শাহের কাছে তুলে ধরেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন আমি কি বলেছি। এদিনের বৈঠকের দিকে বিশেষ নজর ছিল রাজনৈতিক মহলের। দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন রাজ্যপাল। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তিনি বৈঠক করেছেন।
দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। রাজ্যপাল বলেন,” মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ৭৫ মিনিট বৈঠক করেছি। আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও ৭৫ মিনিট কথা হয়েছে। অনেক আলোচনা হয়েছে। সবটা মিডিয়াতে বলা যায় না। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কি কথা হয়েছে সেটাও সামনে আনা উচিত নয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী ও আমার মধ্যে টেনশন বিরাজ করছে, এটা অন্তত আমার মনে হয় না”। দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যপাল অভিযোগ করছেন রাজ্য প্রশাসনের একটা অংশ শাসক দলের হয়ে কাজ করছে। প্রশাসনে রাজনীতিকরণ হয়ে গেছে, এটাই তাঁর মূল অভিযোগ। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন,” গত পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে সন্ত্রাস হয়েছে। সেটাকে ভুলে এই বছরের নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করতে হবে। বাংলার মানুষকে রক্ষা করা আমার কর্তব্য।
স্বচ্ছ এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে হবে। মানুষকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট দক্ষ। তাই আমার মনে হয় এই বছরের নির্বাচন রাজ্যের জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং। সংবিধান রক্ষা করার জন্য যা যা দরকার সব আমি করব। আমার কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের ব্যাপার নেই। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হলে রাজ্যের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। রাজ্যের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমি মনে করি সরকারি কর্মীদের নিরপেক্ষ থাকতে হবে। প্রশাসনের কাজ তো তাই। কিন্তু একটা অংশ সেটা করছে না”। এরপরই তিনি সরব হন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ভূমিকায়।
তিনি বলেন, আমি অবাক হয়ে গিয়েছি এটা দেখে যে, ব্যারাকপুরের পুলিশ একজনকে বলছে তোমরা আদালতে যাচ্ছ কেন? কি করে বলে এমন কথা? এটা আমাদের নৈতিক অধিকার। মানুষ আদালতে যেতে পারবেন না? আমি বিষয়টি জানিয়েছি রাজ্য পুলিশের ডিজিকে”। উল্লেখ্য দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা বহিরাগত বলে আক্রমণ করছেন। দিল্লিতে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন রাজ্যপাল। স্বাভাবিকভাবেই তিনি যেভাবে সেখানে বহিরাগত আক্রমণের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজ্যপাল বলেন,” অবাক করার মতো ব্যাপার। অন্য রাজ্যের মানুষ কেন বহিরাগত হবেন? একজন ভারতীয়কেও বহিরাগত বলা যাবে না। সবাই দেশের মানুষ। জালিওয়ালানাবাগের ঘটনার প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এটাই তো হওয়া উচিত।” রবীন্দ্রনাথ বাংলায় থেকে পাঞ্জাবের ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন। একজন ভারতীয় হিসেবে তিনি সেই ভূমিকা নেন। অর্থাৎ বর্তমানে বিজেপি নেতৃত্ব তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গিয়ে যেসব যুক্তি তুলে ধরেন, মূলত সেগুলি এদিন দিল্লিতে শোনা গিয়েছে রাজ্যপালের মুখে। সবমিলিয়ে রাজ্যপাল দিল্লি থেকে ফের তীব্র আক্রমণ করলেন তৃণমূল সরকারকে। সেই সঙ্গে তিনি দিল্লির সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সবকিছু দেখে ঠিকঠাক প্রকাশ করুন।