।। প্রথম কলকাতা ।।
জাতিসংঘে পাকিস্তানের সম্মান বৃদ্ধি, দেখছে গোটা বিশ্ব
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দু বছরের জন্য জায়গা পাকা করে নিল পাকিস্তান। অস্থায়ী সদস্য পদের ভোটে জয়ী শাহবাজ শরীফের দেশ। এটা পাকিস্তানের কাছে কম বড় পাওনা নয়। এই ক্ষমতা শুধু ধরে রাখলেই হবে না, বরং ওই পদের মর্যাদাও বাড়াতে হবে পাকিস্তানকে। তবেই না গোটা বিশ্বের কাছে সুনাম কুড়াবে। এমনি থেকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে শুরু করে দেশটার আন্তর্জাতিক পলিসির জন্য গোটা বিশ্বের কাছে বহুবার সমালোচিত হয়েছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদ পেতেই প্রশ্ন উঠছে, পাকিস্তান জায়গাটা ধরে আদৌ রাখতে পারবে তো? পাকিস্তান কিন্তু এখন রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য। ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য, পাঁচটি স্বীকৃত পরমাণু শক্তিধর দেশ। আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন আর ফ্রান্স। আর বাকি যে দশটা অস্থায়ী সদস্য পদ রয়েছে, তার জন্য প্রতি দু বছর অন্তর একটা ভোটাভুটি হয়। যে ভোটাভুটিতে নির্বাচন করা হয় পাঁচটি করে দেশকে। এবার ঠিক সেই পদ্ধতিতে পাকিস্তানের পাশাপাশি ভোটে জয়ী হয়েছে সোমালিয়া, ডেনমার্ক, গ্রীস আর পানামা।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বৈশ্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার সবথেকে বড় ফোরাম। বিশ্ব শান্তি বজায় রাখা এবং সম্মিলিত নিরাপত্তার নীতি অনুসরণ করা থেকে নিশ্চিত করা পর্যন্ত, সব দায়িত্ব এই সংস্থার কাঁধে। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদের দশটি অস্থায়ী সদস্যের মধ্যে ছিল জাপান ইকুয়েডর মোজাম্বিক মালটা আর সুইজারল্যান্ড। যাদের মেয়াদ শেষ ৩১শে ডিসেম্বর, এবার তাদের জায়গা পূরণের জন্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সোমালিয়া পেয়েছে ১৭৯টি ভোট। আফ্রিকা এবং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির আসনের জন্য পাকিস্তান পেয়েছে ১৮২টি ভোট। অপরদিকে লাতিন আমেরিকা আর ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর জন্য পানামা পেয়েছে ১৮৩টি ভোট। পশ্চিম ইউরোপ এবং অন্যান্য দেশের জন্য ডেনমার্ক পেয়েছে ১৮৪টি ভোট, আর গ্রিস পেয়েছে ১৮২টি ভোট। মূলত নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যর ক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্থাৎ ১৯৩ টি দেশের মধ্যে ১২৮ টি ভোটের প্রয়োজন। আর এই পাঁচটি দেশই সেই পরিমাণ ভোট পেয়েছে।
বদলে যাবে পাকিস্তানের ইমেজ, শাহবাজ সরকার জায়গাটা ধরে রাখতে পারবে তো?
আপাতত ২০২৫ সাল থেকে পরবর্তী দুই বছরের জন্য এই দেশগুলো নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে মর্যাদা পাবে। এত বড় পাওনায় খুশিতে উপচে পড়ছে পাকিস্তান। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এক্স হ্যান্ডেল লিখেছেন, ১৮২টি ভোট পেয়ে দুর্দান্ত ফল করেছে পাকিস্তান। রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদের তাদের নির্বাচিত হওয়াটা একটা গর্বের মুহূর্ত। বিশ্বব্যাপী যে চ্যালেঞ্জের আবহ চলছে, সেখানে দাঁড়িয়ে শান্তির স্থিতিশীলতা আর উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতায় পাকিস্তান তাদের ভূমিকা অব্যাহত রাখবে। আচ্ছা, এই যে শাহবাজ শরীর এত কথা বলছেন, সত্যি কি পাকিস্তান এটা করতে পারবে? যে দেশটা অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রায় ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে, ক্রমাগত একের পর এক সূচকে পিছিয়ে পড়ছে, বেসামাল হয়ে পড়ছে আন্তর্জাতিক স্ট্র্যাটেজিতে , সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে পাকিস্তানের দায়িত্ব নিয়েও কিন্তু কিছুটা খটকা রয়েছে। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ।
পাকিস্তান এখন জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য নানা বিষয়ের আলোচনায় অংশ নিতে পারবে। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হওয়ার সুবাদে, পাকিস্তানের কিন্তু নিজস্ব বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষাকারী জাতিসংঘের সবচেয়ে শক্তিশালী সংস্থার সদস্য হওয়া মানেই, বিশ্বজুড়ে উন্নত হবে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি। যেখানে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ প্রচারকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের কাছে এটা বড় সুযোগ। পাকিস্তান চাইলেই শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে নিজেদের ইমেজটা আমুল বদলে ফেলতে পারে। সবটাই নির্ভর করছে শাহবাজ শরীফের সরকারের উপর।
ভারতের স্বপ্নের পথে বাধা পাকিস্তান, চীনের সাথে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা!
সমস্যাটা অন্য জায়গায়। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের তিক্ততা কে না জানে। বিশেষ করে কাশ্মীর ইসুকে কেন্দ্র করে দিনের পর দিন সেই উত্তেজনার পারদ বেড়েই চলেছে। তাই কিছু কিছু আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের সামনে একটা বড় সমস্যা তৈরি করলেও করতে পারে পাকিস্তান। কারণ ভারত বহুদিন ধরেই নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদের দাবি জানাচ্ছে। যতদিন যাচ্ছে ততই জোরালো হচ্ছে সেই দাবি। চলতি বছরেই বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতিসংঘের পরিবর্তন হচ্ছে। জনসংখ্যা নিরিখে আজ ভারত বিশ্বের বৃহত্তম দেশ। অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারত রয়েছে পঞ্চম স্থানে। এতকিছু হওয়ার সত্ত্বেও কিন্তু ভারতকে জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য করা হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই এখানে প্রশ্ন উঠছে, জাতিসংঘের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে। ভারত বহুদিন ধরে জাতিসংঘে এই বিষয়ে কথাও বলেছে, কিন্তু বারংবার একটা বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে চীন। ইতিমধ্যেই আমেরিকা ব্রিটেন ফ্রান্স এবং রাশিয়া নয়াদিল্লির দাবিকে সমর্থন জানলেও চীনের জন্য জাতিসংঘে বারংবার ঠোক্কর খেতে হচ্ছে ভারতকে। যা নিয়ে বহুবার বেজিংকে একহাত নিয়েছে নয়াদিল্লি। জয়শঙ্করের দাবী ছিল, ভারত নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদে একদিন অবশ্যই পৌঁছাবে। কিন্তু সেই প্রাপ্তি সহজ হবে না বলেই মনে করেন তিনি। কারণ বহু রাষ্ট্র ভারতকে আটকাতে চায়, আর সেখানেই বারংবার চলে আসে চীনের নাম। বেজিংয়ের সঙ্গে ইসলামাবাদের যথেষ্ট গাঢ় সখ্যতা রয়েছে। তাই পাকিস্তান জাতিসংঘে অস্থায়ী সদস্যপদ পেতেই প্রশ্ন উঠছে, ভারতের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো দেশটা? তৈরি করতে পারে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
আসলে কি বলুন তো, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ইউনিট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৬ সালে এটি তৈরি হয়েছিল। প্রথমদিকে ৫১ জন সদস্য ছিল, ১৯৬৫ তে এসে সেই সদস্য সংখ্যা উন্নত করা হয়। মূল লক্ষ্যই ছিল, গোটা বিশ্বে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। তারপর থেকে ধীরে ধীরে সদস্য সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু বর্তমানে ৫ স্থায়ী সদস্য হল ব্রিটেন আমেরিকা ফ্রান্স রাশিয়া আর চীন। আর এদের হাতেই রয়েছে ব্রহ্মাস্ত্র। যাকে বলে ভেটো দেওয়ার অধিকার। যদি জাতিসংঘের সমস্ত সদস্য দেশ কোন ইস্যুতে একমত হয়, কিন্তু কোন একটি মাত্র স্থায়ী সদস্যদের একমত না হয়, আর যদি ভেটো দেয়, সেই প্রস্তাব কখনোই গ্রহণ করা যাবে না। এই ভেটোর ক্ষমতা প্রচুর। নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে এই ভেটোর প্রয়োগ করে বারংবার ক্ষমতা দেখাচ্ছে চীন। জাতিসংঘে পাকিস্তান অস্থায়ী পদ পেতেই ভারতের দুই শত্রু দেশ নতুন ছক কষতে পারে বলে ধারণা করছে কূটনৈতিক মহল।
আসলে ভারত যখন ক্রমাগত নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার জন্য একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন নতুন নতুন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে চীন আর পাকিস্তান। অস্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার পরে পাকিস্তানও নিরাপত্তা পরিষদের নিজের জন্য স্থায়ী সদস্যপদ দাবি করতে পারে। যদিও ব্যাপারটা অতটাও সোজা নয়। কিন্তু হ্যাঁ, পাকিস্তানের শলাপরামর্শে চীন ভারতের বিরুদ্ধে আবার ভেটো ক্ষমতা ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। আশঙ্কা একদমই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এমনি থেকেই ভারত আর চীনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে কম দ্বন্দ্ব নেই, অপরদিকে ভারত পাকিস্তানেরও চক্ষুশূল। ওই যে কথায় আছে না, শত্রুর শত্রু বন্ধু হয়। চীন আর পাকিস্তানের বন্ধুত্ব ভারতের স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো? সেক্ষেত্রে বহু কূটনীতিক মনে করছেন, জাতিসংঘে নয়াদিল্লির সামনে নতুন সমস্যা তৈরি করতে পারে ইসলামাবাদ। প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে কলকাঠি নাড়তে পারে পাকিস্তান।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম