Israel–Hamas war: হামাসের সাহসে ইসরায়েলের আঁতে ঘা, ফিলিস্তিনকে সাহস যোগাচ্ছে বড় বড় দেশ

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Israel–Hamas war: মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্দ্র করে এখন গোটা বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের আবহ। আর সেখানে বারংবার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছে একটাই নাম। সেটা হল হামাস। গত সাত মাস হয়ে গিয়েছে, গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলের হামলা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত নির্মূল করতে পারেনি হামাসকে। সাম্প্রতিক ডেটা অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে হামাস। কোনমতেই ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে রাজি নয় ,অর্থাৎ নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়। দু পক্ষের মধ্যে একটা পোক্ত যুদ্ধ বিরতি চুক্তি আর গাজাবাসীর সুরাহা না হলে ইসরায়েলি জিম্মিদের কখনোই মুক্তি দেবে না হামাস। ফিলিস্তিনের একটা সশস্ত্র গোষ্ঠী হয়ে এত ক্ষমতা কোথায় পাচ্ছে? রুখে দাঁড়িয়েছে ইসরায়েলের সামনে। শুধু তাই নয়, প্রথম দিকে হামাসকে রুখতে তৎপর হতে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশও । ভাবতে পারছেন ! হামাসের পাওয়ার তাহলে ঠিক কতটা। এত শক্তি কোথা থেকে পায় হামাস? পিছন থেকে সাপোর্ট করছে যারা কল্পনাও করতে পারবেন না। রয়েছে বড় বড় মাথা। হামাসের উত্থানপর্ব মধ্যপ্রাচ্যের বড় ইতিহাস। হামাসের মূল লক্ষ্য ইসরায়েলকে ধ্বংস করা। কিন্তু কেন? এত রাগের কারণটা কী?

 

হামাসের সাহস vs ইসরায়েলের আত্মসম্মানের লড়াই

ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বেশ কয়েকটা দেশ এই হামাস বাহিনীকে জঙ্গি গোষ্ঠী বলে মনে করলেও, গাজা ভূখণ্ডে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি নাগরিকদের কাছে কিন্তু এই হামাস মুক্তিদাতার মতো। আবার বিশ্বের বহু দেশের কাছে, এই সশস্ত্র গোষ্ঠী পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা নামে। আবার কেউবা বলে এরা স্বাধীনতা সংগ্রামী। যদি গত সাত মাসের আগের কথা বলেন, তখন কিন্তু হামাস অতটা নজরে আসেনি। শুধুমাত্র একটা সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবেই পরিচিত ছিল। গোটা বিশ্বের ইতিহাসে হামাসকে নিয়ে এত তোলপাড়ও পড়েনি। কিন্তু যখন গাজা ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি এলাকাকে লক্ষ্য করে প্রায় পাঁচ হাজার রকেট ছুঁড়ল, তখন বুঝিয়ে দিল যে তাদের ক্ষমতা কতটা। স্থলপথে, জলপথে, আর আকাশ পথে সমান্তরাল ভাবে হামলা চালিয়ে কিছুক্ষণের জন্য রীতিমত নাস্তানাবুদ করে দিয়েছিল ইসরায়েলকে। ইসরায়েলের সীমানা লঙ্ঘন করে ভেতরে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছিল। এই হামলায় ইসরায়েলের যতটা না ক্ষতি হয়েছে, তার থেকে আঁতে ঘা লেগেছে বেশি। লাগাটাই তো স্বাভাবিক। ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব বহু পুরনো। আজ সেই ফিলিস্তিনের এক যোদ্ধা গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াই হচ্ছে ইসরায়েলের। এই যুদ্ধ কবে থামবে এখনও বলা যাচ্ছে না। কারণ ইসরায়েলও একরোখা। ব্যাপারটা এখন পুরোটা চলে গিয়েছে আত্মসম্মানের দিকে। হামাসের কাছে যদি ইসরায়েল পরাজিত হয়, তাহলে বিশ্ব রাজনীতিতে হালকা হয়ে যেতে পারে নেতানিয়াহুর ক্ষমতা।

 

হামাসের উত্থানে ফিলিস্তিনিদের নতুন স্বপ্ন, কতটা শক্তিধর এই গোষ্ঠী?

হামাসকে অতটাও দুর্বল ভাবা আবার ভুল। সেই ২০০৭ সাল থেকে গাজা ভূখণ্ডের শাসন ক্ষমতা রয়েছে এই যোদ্ধা গোষ্ঠীর হাতে। এই গোষ্ঠীর জন্ম ১৯৮৭ সালে। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং গাজা ভূখণ্ডে ইজরায়েলিদের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলন থেকে। মিশরীয় সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের শাখা হিসেবে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আহমেদ ইয়াসিন আর আবদেল আজিজ আল রান্টিসি। এক বছর পর অর্থাৎ ১৯৮৮ সালে হামাস তৈরি করে তাদের সনদ। তখন প্রাথমিকভাবে দুটো উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত এর সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল কাশেম ব্রিগেডস এর মাধ্যমে মাধ্যমে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। আর দ্বিতীয়টা হল, ফিলিস্তিনে বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করা। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর যেভাবে সীমান্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল, ফিলিস্তিনের সেই সীমান্ত মেনে নেয় হামাস, তবে কখনো ইসরায়েলকে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেয়নি। একটা সময় গাজা ভূখন্ডে ছিল মিশরের দখলদারি। ২০০৭ সালে ৩৮ বছর পর তার অবসান ঘটতেই, হামাস সংসদীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে। তারপর সরকার গঠন করলেও ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।

 

২০১৭ সাল নাগাদ হামাস নেতা খালেদ মিশাল বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন, যাই হয়ে যাক না কেন, ফিলিস্তিনি ভূখন্ডের এক ইঞ্চি মাটিও তারা ছাড়বে না। এই যে ইসরায়েল আর হামাসের মধ্যে এত দ্বন্দ্ব, তা মেটাতে ১৯৯০ দশকে ইসরায়েল ও পিএলওর মধ্যে সমঝোতা করার চেষ্টা করা হলেও, সব বিফলে যায়। তা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছিল হামাস। হামাসের প্রধান লক্ষ্যই নাকি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা। পাশাপাশি ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক, গাজা ভূখণ্ড আর ইসরায়েলে একটা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। হামাসের মতে, তাদের মূল শত্রু ইসরায়েল, আর লক্ষ্য ইসরায়েলকে ধ্বংস করা। মাঝে একবার ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবও দিয়েছিল। যেখানে ছিল একটা শর্ত। ১৯৬৭ সালে ৬ দিনের যুদ্ধের আগের যে অবস্থানে ছিল, ইসরায়েলকে তার দখলদারি ছেড়ে সেই অবস্থানে ফিরে যেতে হবে। পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের এবং ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুরা যাতে দেশে ফিরে যেতে পারে তার অনুমতি দিতে হবে। হামাস এও বলে যে, তারা মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক শেষ করবে। তখনো কিন্তু ইসরাইল হামাসের সেই দাবি মানেনি। বরং যুক্তি দিয়েছিল, ভালো ভালো কথা বলে নাকি গোটা বিশ্বকে বোকা বানাতে চাইছে হামাসগোষ্ঠী।

 

স্বাভাবিকভাবেই তখনও সমঝোতায় আসেনি ইসরায়েল আর হামাস। আর এখনো আসছে না। আর মাঝখান থেকে অত্যন্ত করুণ দুর্দশায় পড়েছে গাজা বাসী। আর আল আকসা মসজিদ নিয়ে তো এই দুই পক্ষের মধ্যে বিতর্কের শেষ নেই। ইসরাইলের দাবি ইহুদিদের পবিত্র ধর্মীয় স্থান ধ্বংস করে নাকি এখানে মসজিদ স্থাপন করা হয়েছিল। আর অপরদিকে হামাসের দাবি, এই মসজিদকে অপবিত্র করেছে ইসরায়েলি দখলদাররা। আর তারই প্রতিশোধ হিসেবে তারা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের উপর। ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা মনে করিয়ে দেয়, প্রায় ৫০ বছর আগে ১৯৭৩ সালের কথা। যখন মিশর আর সিরিয়া একজোট হয়ে ইসরায়েলের উপর আচমকা হামলা চালিয়েছিল । এই ঘটনা ছিল মধ্যপ্রাচ্যের একটা বড় ঘটনা। মুহূর্তে বেঁধে যায় যুদ্ধ। আর ঠিক তার ৫০ তম বার্ষিকীর একদিন পরেই নজিরবিহীন ভাবে ইসরায়েলে আক্রমণ চালায় হামাস।

 

হামাসের বল বাড়াচ্ছে যে যে দেশ

প্রথম থেকেই হামাসের সাপোর্টে আছে ইরান সিরিয়া আর ইয়েমেন। কারণ ইরান সিরিয়া লেবাননে যে ইসলামিক গোষ্ঠী গুলো সমাসের কট্টর সমর্থক। তালিকায় রয়েছে হিজবুল্লাহ মিলিশিয়া আর হুথি। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইলের উপর হামাসের হয়ে প্রতিশোধ নিতে কম হামলা চালাচ্ছে না হিজবুল্লাহ। শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশে হামাসের বিপুল সমর্থক রয়েছে। এমনকি এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতি কাতারও বেশ সহানুভূতিশীল। আর ওদিকে আরব লীগ মরক্কো সৌদি আরব এই সংঘাতে ইসরাইলকে সংযম রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে, অর্থাৎ পরোক্ষভাবে সাপোর্ট করছে হামাসকে। আর যদি মুদ্রার উল্টোপিটের কথা বলেন, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ব্রিটেন কানাডা জাপানসহ বেশ কয়েকটা দেশ হামাস মনে করে একটা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে। মধ্যপ্রাচ্যে হামাসের সব থেকে বড় পৃষ্ঠপোষক দেশ বলে মনে করা হয় কাতারকে। ২০১২ সালে প্রথম রাষ্ট্রনেতা হিসেবে হামাসের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন কাতারের আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল থানি। এ পর্যন্ত দেশটি নাকি হামাসকে প্রায় ২০০ কোটি ডলার অর্থায়ন করেছে। অঙ্কটা নেহাত কম নয়। আর হামাসের আরেক পৃষ্ঠপোষক হল তুরস্ক। এছাড়াও ক্ষেপণাস্ত্র সহ সমরাস্ত্র প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করে ইরান। শোনা যায়, সুদান আর মিশরের মাধ্যমেও গাজায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রপাচার হয়ে থাকে।

 

এখন গাজা ঘিরে যেন চলছে হামাসের মরণপণ লড়াই। এই গাজা উপত্যকা বলতে বোঝায়, ইজরায়েল মিশর ভূমধ্যসাগরের মধ্যে প্রায় ৪১ কিমি দীর্ঘ আর ১০ কিমি প্রশস্ত অঞ্চল। বর্তমানে পশ্চিম তীর আর গাজা এগুলো ফিলিস্তিনি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। ১৯৪৮ সালের ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পেলেও, যে সমস্ত রাষ্ট্র এখনো ইসরায়েলের অস্তিত্বকে স্বীকার করে না, তারা এই অঞ্চলকে উল্লেখ করে ফিলিস্তিন হিসেবে। পাশাপাশি ফিলিস্তিনিরাও গাজা, পশ্চিম তীর পূর্ব জেরুজালেমকে একসাথে ফিলিস্তিন নামে ডাকে। গাজা বিশ্বের অন্যতম একটা ঘন বসতি এলাকা, যেখানে বসবাস করেন প্রায় ২৩লক্ষ মানুষ। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এখন চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে গাজার সাধারণ মানুষ। এই মুহূর্তে যুদ্ধ বিরতি ছাড়া আর অন্য কোন রাস্তা নেই। তবে সেই আশা অনেকটা আলেয়ার মতো।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version