।। প্রথম কলকাতা ।।
Hollong Bungalow Fire: রাত অনেক পুড়ে ছাই হয়ে গেলো জলদাপাড়ার ঐতিহাসিক হলং বন বাংলো। বিধ্বংসী আগুনে সব শেষ। সুন্দরী ডুয়ার্স কে সবচেয়ে ভালো উপভোগ করা যেত এই বাংলো থেকে। প্রকৃতির অপূর্ব শোভা দেখা যেত হলং থেকে। বাংলোর ঘরে বসেই দেখা যেত হাতি গণ্ডার। যে বাংলো নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে দড়ি টানাটানি চলে সারাবছর তা আগুনে পুড়ে শেষ। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকার মত। আট দশ গুনেরও বেশি দামে বুকিং চলতো বলে শোনা যায়।
কমবেশি ৫৭ বছরের বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে ছিল হলং বাংলো। তৈরি হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। বলা ভালো ডুয়ার্সের হট কেক ছিল হলং বাংলো। এই বনবাংলোটি ছিল রাজ্য বন দফতরের অন্যতম মহার্ঘ সম্পত্তি। সেলিব্রেটি হোক কী আম জনতা, এই বাংলোয় বুকিং নেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকত সকলেই। সেটা স্বাভাবিকও। এত কাছ থেকে প্রকৃতিকে এত সুন্দরভাবে দেখার জন্য এরচেয়ে ভালো জায়গা আর কী হতে পারে? এই বাংলাতে থাকলে বোঝা যেত জঙ্গলের থাকার কি রোমাঞ্চ। ডুয়ার্সের মধ্যে অত্যন্ত সুন্দর লোকেশনে এই বাংলো। ভাবুন না, আপনি বাংলো থেকেই দেখতে পাচ্ছেন, হাতি, গণ্ডারের দল। ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাইসনরা। উফফ, সে এক অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি।
আর এই সমস্ত কিছু শেষ হয়ে গেল এক লহমায়। উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্য এখন কার্যত এক ভূতুড়ে বাড়ি। মঙ্গলবার রাত প্রায় সওয়া ন’টায় পুড়ে রাখ হয়ে গেল হলং বাংলো। বিধ্বংসী আগুনে সব শেষ। বাংলোর একটি এসিতেও বিস্ফোরণ হয়।। প্রাথমিক অনুমান, শট সার্কিট থেকেই ঘটেছে এই দুর্ঘটনা। কাঠের বাংলো, তাই আগুন ছড়িয়ে পড়তেও খুব বেশি সময় নেয়নি। কিন্তু পর্যটক না থাকলে এসি কেন চালানো হবে? সেটা সেটা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। ইতিমধ্যেই পুরো বিষয়টার তদন্ত শুরু করেছে বনদপ্তর। তবে এই ঘটনা কার্যত নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা উত্তরবঙ্গকে।
উত্তরবঙ্গের একটা হেরিটেজ ছিল হলং বাংলো। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন জ্যোতি বসু নিয়মিত আসতেন এই বাংলোয়। ফি বছরই তিনি এখানে আসতেন। তারপর থেকেই হলং বাংলোর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। রাজ্য সরকারের অধীনেই ছিল বাংলোটি। এখানকার নৈস্বর্গিক পরিবেশ জাস্ট চোখ জুড়িয়ে দিত। আসলে হলং বাংলো থেকে খুব কাছ থেকে প্রকৃতিকে পর্যবেক্ষণ করা যায়। ভ্রমন পিপাসুদের কাছে স্বর্গরাজ্য ছিল এটি। যে কারণে চড়া দামে বুকিং করত পর্যটকরা। এই বাংলোর ক্রেজ এতটাই যে, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৮-১০ গুণ বেশি ভাড়া দিতেও পিছপা হতনা মানুষ।
জলদাপাড়া অভয়ারণ্য থেকে ৭-৮ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে হলং। দু’দিকে সবুজের সমারোহ। এখান থেকেই দেখা যেত বাইসনেরা তার বাচ্চাকে নিয়ে জল খেতে আসছে। গণ্ডাররা ঘাস খেতে আসত এখানে। পর্যটকদের মন ভোলাতে নানা প্রজাতির পাখির সমাগম হত এখানে। বাংলোর সামনে থেকে দেখা যেত হরিণ ঘুরছে। কপাল ভালো থাকলে লেপার্ডের দেখাও মিলত বলে শোনা যায়। এমনকি রাতে হাতির পাল সামনে এলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। হলং আরও একটা কারণের জন্য বিখ্যাত ছিল। এই বাংলোর বুকিং থাকলে সহজেই জলদাপাড়া এলিফ্যান্ট সাফারি করা যায়। কেবলমাত্র এইটার জন্যই অনেকেই হলং-র বুকিং করতেন।
হলং থেকে ৩০ মিটার দূরেই রয়েছে বনকর্মীদের কোয়ার্টার। সেখান থেকে একটু এগিয়ে গেলেই রয়েছে হাতি পিলখানা। জঙ্গলের নিস্তব্ধতায় কিছুটা সময় কাটাতে দেশ বিদেশ থেকে পর্যটক আসত এখানে। স্বভাবতই এমন একটা স্বর্গরাজ্য শেষ হয়ে যাওয়ার খবরে হতাশ পর্যটকরাও। এখন কী হবে? সরকার কি আবার নতুন করে সাজিয়ে তুলবে হলংকে। কারণ এটা কয়েক হাজার বা লক্ষ্য টাকার ব্যাপার তো নয়। সূত্র বলছে, কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এই অগ্নিকাণ্ডে। তাই আপাতত সরকারের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে পর্যটকরা এবং গোটা উত্তরবঙ্গের মানুষ।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম