।। প্রথম কলকাতা।।
Bappi Lahiri: তিনি মঞ্চে এন্ট্রি নিলেই চারিদিক ঝলমলিয়ে উঠত। তাঁর গানে নেচে উঠতো সবাই। সঙ্গীতের দুনিয়ায় একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব তিনি। সাড়ে ৪ দশক দীর্ঘ মিউজিক্যাল কেরিয়ারে ৬৫০-এর বেশি ছবির মিউজিক কম্পোজ করেছেন এই ব্যক্তিত্ব। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাঁর গানে মুগ্ধ হয়েছে। বলিউডের এক জেনারেশন থেকে অন্য জেনারেশনের জন্য গান গেয়েছেন তিনি। ৬৯ বছর বয়সে আচমকা তাঁর চলে যাওয়া সঙ্গীত দুনিয়ার জন্য এক অত্যন্ত বড় ক্ষতি। গান দিয়ে ভক্তদের মাঝে আজীবন বেঁচে থাকবেন বাপ্পি লাহিড়ী (Bappi Lahiri)।
‘ডিস্কো’ কী জিনিস, বলিউডকে (Bollywood) বুঝিয়েছেন তিনি। গেল বছর সঙ্গীত দুনিয়া হারিয়েছে একের পর এক কিংবদন্তি শিল্পীকে। ২০২২-এ সুরলোকে পাড়ি দিয়েছেন লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar), সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukherjee)। যে তালিকায় নাম রয়েছে কিংবদন্তি গায়ক বাপ্পি লাহিড়ীরও। মাত্র তিন বছর বয়সে তবলা শিখেছিলেন। ছোট থেকেই মায়ানগরীতে পা রাখার স্বপ্ন বুনেছিলেন। ১৯৫২-য় জলপাইগুড়িতে জন্ম নেওয়া সেই ছেলেটি কখনও যে বলিউড ইন্ডাস্ট্রির একজন অন্যতম জনপ্রিয় খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বের তালিকায় নিজের নাম লেখাবেন, তা হয়তো ভাবেননি অনেকেই। ছোটো থেকেই তাঁর পরিবারে সঙ্গীতের চর্চা ছিল। বাবা অপরেশ লাহিড়ী এবং মা বাঁশুড়ি লাহিড়ী দু’জনেই সঙ্গীত জগতের অত্যন্ত পরিচিত মুখ। তাই তাঁর গানকে নিজের কেরিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়া, অবাক করেনি কাউকে। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে তেমন একটা যেতে হয়নি তাঁকে।
মাত্র ১৯ বছর বয়সে মুম্বইতে (Mumbai) পা রাখেন বাপ্পি লাহিড়ী। চোখে তখন রঙিন স্বপ্ন, যা বাস্তবায়িত হতে শুরু করে ১৯৭৩ থেকে। হিন্দি সিনেমা ‘নানহা শিকারী’তে প্রথম গান রচনা করেন তিনি। এর দু’বছর পর ১৯৭৫-এ তাহির হুসেনের ‘জখমী’ সিনেমায় কাজ করেছেন বাপ্পি দা। যদিও ১৯৭২-এ বাংলা ছবি ‘দাদু’তে সুর দিয়েছিলেন। কিন্তু কলকাতা (Kolkata) বেশি পছন্দ ছিল না তাঁর কাছে, তাই মুম্বইতে পারি দেওয়া। কাজলের বাবা তথা তনুজার স্বামী শমু মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে প্রথম ব্রেক পান। পরে ১৯৭৪-এ রাহুল দেব বর্মনের (RD Barman) যখন খুবই ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে, তখন প্রযোজক হুসেনের ছবি ‘মদহোস’-এ গানের ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করার অফার পান। তবে সেই সময় বাধা হয়ে দাঁড়ান তাঁর বাবা। বলেছিলেন, ছবিতে কাজ করার জন্য নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট আনতে হবে আর ডি বর্মনের কাছ থেকে। ভবিষ্যতে যেন ছেলেকে কোনও সমস্যার মুখোমুখি না হতে হয়, তার জন্যই ওরকম দাবি করেন বাবা। রোমান্টিক গান থেকে শুরু করে ভজন, কাওয়ালি সমস্ত কিছুতেই দক্ষ ছিলেন তিনি। সোনার গয়নার প্রতি এক আলাদাই ভালবাসা ছিল তাঁর। গলায় প্রচুর সোনার গয়না পরে থাকতেন তিনি।
‘ডিস্কো ড্যান্সার’, ‘ঝুম ঝুম ঝুম বাবা’, ‘ইয়ার বিনা চ্যায়ান কাঁহা রে’, ‘তম্মা তম্মা’ ইত্যাদি তাঁর কালজয়ী সৃষ্টি। এছাড়া তালিকা আরও বড়। তাঁর অত্যন্ত জনপ্রিয় গান ‘জিমি জিমি আজা আজা’ হলিউড ছবি ‘You Don’t Mess With The Zohan’s’-এ ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া অনেক ছবিতে অতিথি শিল্পী হিসেবে দেখা গিয়েছে তাঁকে। যেমন- ‘ওম শান্তি ওম’, ম্যায় অউর মিসেস খান্না’ ও আরও অনেক। ১৯৮৬-তে ‘গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড’-এ নিজের নাম তুলেছেন গায়ক। ৩৩ টি ছবির জন্য ১৮০টি গান রেকর্ড করে নিজের নাম তুলেছেন তিনি। তিনিই একমাত্র মিউজিক ডিরেক্টর, যিনি জোনাথন রসের লাইভ পারফরমেন্সে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। এক কথায় বলতে গেলে, নিজের জীবন অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে, উচ্ছ্বাসের সঙ্গে কাটিয়েছেন তিনি। তাঁর নাম রয়েছে লন্ডন বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন এই ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের জনপ্রিয় তারকা লেডি গাগা থেকে শুরু করে অনেকের সঙ্গেই কাজ করেছেন। ১৯৯৬-তে মাইকেল জ্যাকসন মুম্বইতে আসেন। তাঁর সঙ্গেও বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল বাপ্পিদার। তাঁর কনসার্টে ভারতীয় সঙ্গীত জগত থেকে আমন্ত্রিত ছিলেন তিনি। এরম একজন প্রতিভাবান শিল্পীকে ২০২২-এর আজকের দিনে হারিয়েছে সঙ্গীত দুনিয়া।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম