‘ঠেঙ্গিয়ে পগার পার’ করার নিদান অনুব্রত মণ্ডলের

।। শর্মিলা মিত্র ।।
ভোটের আগে ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে রাজনৈতিক আক্রমণ। বিধানসভা নির্বাচনের আগে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি একফোঁটাও জমিও ছাড়তে নারাজ শাসক-বিরোধী উভয় শিবিরই। ইতিমধ্যেই বেজে গিয়েছে বিধানসভা নির্বাচনের দামামা। রাজ্য বিজেপির শক্তিকে মজবুত করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই বঙ্গ সফরে এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) এসেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাও (JP Nadda)। ইতিমধ্যেই বীরভূমে অমিত শাহ-র রোড শোতে জনজোয়ার দেখেছে রাজ্যের মানুষ। পাশাপাশি একই জায়গায় তৃণমূল নেত্রীর মিছিলে জন সমুদ্রের স্বাক্ষী থেকেছে গোটা বীরভূম। আর তারপর থেকেই নিজের স্বভঙ্গিমায় ফিরেছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)।
ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে বর্ধমানের কেতুগ্রামের জনসভা থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছাড়েন অনুব্রত মণ্ডল। এবার সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকে পুরন্দরপুর ব্লক অফিসের মাঠে তৃণমূলের জনসভা থেকে ঈশ্বর ও আল্লার উদ্দ্যেশে প্রণাম করে অনুব্রত মন্ডল বলেন ‘সিউড়ির মাটি বড় শক্ত মাটি’। তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে আমরা কেউ নেতা নই আমরা সবাই কর্মী, নেতার কোন দাম নেই, কর্মীদেরই প্রধান দাম’। সেখান থেকে বিজেপির মিছিলকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘বন্ধু, বোলপুরে মিছিল করলে সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকের ৬টা অন্চলের লোক তো অনেক চলে গেল’ পাশাপাশি সাংবাদিকদের উদ্দ্যেশে তার মন্তব্য, ‘সিউড়ি ২ সবাইকে একসঙ্গে দেখাতে পারবেন ? একসঙ্গে সবাইকে দেখাতে পারলে তিনি ‘রাজনীতি থেকে অবসর নেব’ বলে বলেন তৃণমূল নেতা তথা বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)।
আরো পড়ুন : অনেক হয়েছে, আর নয়, এবার বিজেপি গুডবাই জানাচ্ছে শোভন-বৈশাখীকে?
তার দাবি, ‘৬টা অন্চলের লোক নিয়ে বিজেপি যদি এই মাঠটা ভরিয়ে দেয় তাহলে তিনি রাজনীতি করবেন না রাজনীতি ছেড়ে দেবেন।’ তার মন্তব্য ‘পারবে না তোমার লোক নেই , তোমার জোর নেই’। তার কটুক্তি ‘তোমার আছে মিডিয়া, তোমার আছে মিথ্যাকথা, আছে মানুষকে ভুল বোঝানো’। তার মন্তব্য, ‘বাংলার মানুষ তোমাকে বিশ্বাস করেনা, তোমরা নেমকহারাম, তোমরা বেইমান, তোমরা কথা যা দাও একটা কথা রাখোনা।’ এইভাবে নাম না করে বিজেপির বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দাগেন অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। দিল্লির কৃষক আন্দোলন নিয়ে তার বক্তব্য, ‘তুমি বলছ তুমি আলু লাগাবে আমি নিয়ে নেব, তুমি ধান লাগাবে আমি নিয়ে নেব, তুমি গম লাগাবে আমি নিয়ে নেব, আমরা কী ভ্যারেন্ডা চুষবো, আমরা কষ্ট করে চাষ করব আর তুমি ভারতবর্ষকে বিক্রি করে দেবে’?
এইভাবেই জনসভা থেকে নাম না করে কেন্দ্রীয় সরকারকেও একহাত নেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। পাশাপশি তার মন্তব্য, ‘বাংলা মানে না, বাংলা তৈরি করে, বাংলাকে হারানো যায়না, বাংলাকে মিথ্যা কথা বলা যায়না, বাংলাকে ভুল বলানো যায়না।’ অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নাম করে অনুব্রত মণ্ডলের প্রশ্ন ‘লজ্জ্বা লাগেনা ? ১৪ সাল থেকে এসেছ আট বছর হয়ে গেল একটা প্রকল্প বলতো নরেন্দ্র মোদি যে প্রকল্পটা বিজেপি সরকার করেছে।’ পাশাপাশি বাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কথা বলে তার মন্তব্য ‘তুমিতো পাঁচটা পয়সা দিলেনা আর মা মাটি মানুষের মুখ্যমন্ত্রী ৯ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষকে ৫ লাখ টাকা করে বছরে দিচ্ছেন, ৫ বছরে ২৫ লাখ টাকা দিচ্ছেন।’ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দ্যেশে তিনি আরও বলেন, ‘তুমিতো মিথ্যা কথা বলেছ, তুমিতো মানুষকে কিছু দিলেনা, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করলে, তুমি কৃষককে কিছু দিলে না, তুমি চাষীকে কিছু দিলে না, তুমি দিনমজুরকে কিছু দিলে না, তুমি খেটে খাওয়া মানুষকে কিছু দিলে না।
মা মাটি মানুষের মুখ্যমন্ত্রী তা কিন্তু করেনি, মা মাটি মানুষের মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে একসঙ্গে দেখল। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বাংলার কষ্ট দেখতে পারেনা’ বলেও মন্তব্য করেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। বিজেপির উদ্দ্যেশে তার মন্তব্য ‘তোমরা যে বাংলাকে ভালোবাসেন না, তোমরা বাংলার ক্ষতি চাও, বাংলার উপকার চাওনা, বাংলার মানুষ ভালো থাকে তোমরা চাওনা, তোমরা বাংলার সর্বনাশ চাও’। তার স্পষ্ট জবাব ‘হতে দেবনা। আমরা বাঙালি, আমরা বোকা নই। তোমার কথায় আমরা ভিজব না’। বিজেপির সোনার বাংলা গড়ার প্রসঙ্গে অনুব্রত মন্ডলের কটাক্ষ ‘মূর্খ সোনার বাংলা’, তার প্রশ্ন ‘মধ্যপ্রদেশ কে পেয়েছে, বিজেপি, উত্তরপ্রদেশ কে পেয়েছে, বিজেপি, গুজরাট কে পেয়েছে, বিজেপি, ওখানে কী সোনার গুজরাট করা যাচ্ছেনা, মধ্যপ্রদেশে করা যাচ্ছেনা।’
তার কটাক্ষ, ‘আগে ওইগুলো করুন, তবে তো এগুলো করবেন, ওইটা না করে এটা করতে আসছেন কেন? বাংলার মানুষ কী এত বোকা। তুমি মিথ্যা কথা বলবে আর বাংলার মানুষ ভেবে নেবে তুমি সত্যি কথা বললে।’ পাশাপাশি তার প্রশ্ন, ‘তোমার লজ্জ্বা করেনা বাঙালিকে ঠকাতে ?’ তাই সিউড়ির ২ নম্বর ব্লকের মানুষের কাছে তার জিজ্ঞাস্য ১৮ হাজার লিড তারা দেবেন কিনা ? পাশাপাশি বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) সকলকে পরামর্শ ‘ভোটের আগে টাকা দিতে এলে নিয়ে নেবেন কারণ ওগুলো ওদের বাবার টাকা নয় চুরি করা টাকা, টাকা নিয়ে নিন ভোট টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) দেবেন।’ পাশাপাশি ‘ঠেঙ্গিয়ে পগার পার’ করার নিদান বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal)।