দিল্লিতে রাজ্যপাল, রাজ্যে কমিশন, জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক ডাকলেন মমতা

।। প্রথম কলকাতা ।।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জরুরি ভিত্তিতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকলেন। উপস্থিত ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, নয়াগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক দুলাল মূর্মু প্রমূখ। বৈঠক শেষে সৌগত বলেন,” এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেই আলোচনা করতেই ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছিল। নতুন করে ওয়ার্কিং কমিটিতে এলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং মলয় ঘটক। আমরা কৃষি আইনের বিরোধিতা করছি। কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন করছি। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এর পাশাপাশি আমাদের তিন বিধায়ক এবং দলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত থাকা মানিক মজুমদারের মৃত্যু হয়েছে। মানিকবাবুর পাশাপাশি আমরা মৃত তিন বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ, সমরেশ দাস এবং গুরুপদ মেটেকে বিশেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছি। তৃণমূলের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শুভাশিস চক্রবর্তীকে। এতদিন সেই দায়িত্বে ছিলেন তমোনাশ ঘোষ। ১৮ তারিখ নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী সভা করবেন। পরের দিন তিনি পুরুলিয়া যাবেন। এই সমস্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে”। অর্থাৎ দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সৌগতবাবু। যদিও যে পরিস্থিতিতে এদিনের বৈঠক ডাকা হয়েছে, সেটা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আগামীকাল দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করবেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankar)। এর পাশাপাশি চলতি মাসের ১২-১৩ জানুয়ারি রাজ্য সফরে আসছেন উপ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন।
কাল রাজ্যে আসছেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা। মাসের শেষে আসবেন অমিত শাহ। আসার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। সাম্প্রতিককালে তৃণমূল দলীয় নেতাদের দল ছাড়ার ঘটনায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে। বহু বিধায়ক দল ছেড়েছেন। আরো অনেকে ছাড়তে পারেন এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তাই একটি সূত্রে খবর, দলকে কিভাবে সংঘবদ্ধ রাখা যায় সেই বিষয়টি নিয়ে এদিন মূলত আলোচনা করা হয়েছে। এটাও জানা গিয়েছে যে, এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের ভোট ম্যানেজার প্রশান্ত কিশোর। অর্থাৎ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সামগ্রিক স্ট্র্যাটেজি কি হবে, তার একটা প্রাথমিক রূপরেখা এদিন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
শুধুমাত্র দলের সাংগঠনিক পরিবর্তনের জন্য হঠাৎ করে জরুরি ভিত্তিতে এমন বৈঠক ডাকা হয়েছে, সেটা কেউ মনে করছেন না। কারণ এদিনের বৈঠক সম্পর্কে আগে থেকে কোনো খবর ছিল না। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গেই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। সূত্রে জানা গিয়েছে, এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই রাজ্যে ভোট পর্ব শুরু হয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যে ভোট হবে। রাজ্যপাল প্রতিনিয়ত তৃণমূল সরকারকে আইনশৃঙ্খলার পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে আক্রমণ করে চলেছেন। কাল তিনি বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। তবে কি কোনো বড় সমস্যার আঁচ করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব? সেই প্রশ্ন তুলছে ওয়াকিবহাল মহল। তার ভিত্তিতেই শুক্রবার হঠাৎ জরুরি ভিত্তিতে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সরকারকে আরো বেশি করে আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা যাবে বলে মনে করছে তৃণমূল। সেই মতোই নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে বলে খবর। উল্লেখ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পর শুভেন্দু অধিকারী প্রতিদিন বলছেন নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি চালু হয়ে যাওয়ার পর দেখবেন খেলা কোন দিকে গড়ায়। তিনি যে বিশেষ কিছু ইঙ্গিত করছেন, সেটা স্পষ্ট। সবকিছু মাথায় রেখেই এদিন মমতা ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও সৌগতবাবুর পাশাপাশি বৈঠক থেকে বেরিয়ে কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, এটা একেবারেই অভ্যন্তরীণ বৈঠক। সেটা মিডিয়াতে বলা যায় না। অর্থাৎ মূল আলোচিত বিষয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব যে বিশেষ গোপনীয়তা বজায় রাখতে চাইছেন, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।