সব কিছু জানা, গাছপালার গন্ধ বড্ড চেনা, নয়া রূপে নন্দীগ্রামে প্রথম সভা শুভেন্দুর

।। প্রথম কলকাতা ।।
এই মাটি আন্দোলনের মাটি। সুদূর অতীতে একটি ঘটনার জেরে নন্দীগ্রামের পরিচিতি হয়েছিল দারোগা পোড়ার দেশ হিসেবে। তৎকালীন কিংবদন্তি বামনেতা ভূপাল পান্ডার কর্মভূমি এই নন্দীগ্রাম। অর্থাৎ আন্দোলন এবং নন্দীগ্রাম, শব্দ দুটো যেন মেড ফর ইচ আদার হয়ে গিয়েছে বহুদিন ধরেই। রাজ্যবাসী ফের তা প্রত্যক্ষ করেছে ২০০৭ সালে। আর সেই আন্দোলন জন্ম দিয়েছে তরুণ তুর্কি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। তখন থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে চিরকালের জন্য প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তিনি। কালের নিয়মে রাজ্যবাসী দেখেছে সরকার পরিবর্তনের ঘটনা। এরপর নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রধান কান্ডারী শুভেন্দু অধিকারী (Subhendu Adhikari) কিছুদিন আগে তৃণমূল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে।
গেরুয়া শিবিরে যোগ দেবার পর নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়ক শুভেন্দু এই প্রথম জনসভা করছেন সেখানে। এই জায়গা তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। গাছপালা, মাটির গন্ধ বড়ই আপনার তাঁর। প্রতিটি মানুষকেই ব্যক্তিগতভাবে নামে চেনেন। বলাবাহুল্য।নন্দীগ্রাম ঘিরে অনেক নস্টালজিয়া ঘিরে রেখেছে শুভেন্দুকে। একটু আগেই সভামঞ্চে প্রবেশ করেছেন তিনি। চরম উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জনতা তাঁকে বরণ করে নিয়েছে। সকাল থেকেই কাতারে কাতারে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা রওনা দিয়েছেন নন্দীগ্রামের দিকে। নন্দীগ্রামের টেঙ্গুয়া মোড়ের কাছে সকাল থেকেই জমায়েত হতে থাকেন কর্মীরা। তাঁদের উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাক ঢোল, ব্যান্ডপার্টি সহযোগে তাঁরা ভিড় জমিয়েছেন সেখানে। মাথায় সবার গেরুয়া টুপি, তাতে ইংরেজিতে লেখা বিজেপি, সঙ্গে পদ্ম ফুলের ছবি। এটা শুভেন্দুর একটা নিছক সভা নয়।
রীতিমতো প্রেস্টিজ ফাইট। নন্দীগ্রাম আগামীদিনে শুভেন্দুর অঙ্গুলিহেলনেই চলবে কিনা, সেটা আজ তাঁর বুঝিয়ে দেওয়ার পালা। আগেই বলেছেন এক লক্ষ মানুষকে নিয়ে আজ সভা করবেন তিনি। মানুষ কথা রেখেছেন। শুভেন্দু আসবার বহু আগেই ভরে গিয়েছে জনসভাস্থল। এদিন শুভেন্দুর সঙ্গে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব উপস্থিত থাকলেও সভার মূল আকর্ষণ যে তিনিই, সেটা সকলেই জানেন। গতকাল নন্দীগ্রামে সভা করার কথা ছিল তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু সেই সভা বাতিল হয়েছে। শোনা যাচ্ছে ১৮ তারিখ নন্দীগ্রামে সভা করবেন মমতা। মমতা সভার দিন কেন পিছিয়ে দিলেন সেই ব্যাপারে নিশ্চয়ই কথা বলবেন শুভেন্দু। এদিন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) জনসভার আগে শুভেন্দু সম্পর্কে বলেছেন, তিনি একজন দলের কর্মী। তবে নিজের পরিচয়েই তিনি একজন বড় নেতা।
আরো পড়ুন : শুভেন্দু নন্দীগ্রামে পৌঁছনোর আগে উত্তপ্ত এলাকা, ফ্লেক্স ব্যানার ছেঁড়া নিয়ে গন্ডগোল
বস্তুত রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাদ দিলে যে হাতে গোনা কয়েকজন নেতা আছেন, যাদের ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় জনসভা ভর্তি হয়ে যেতে পারে, তাঁদের মধ্যে প্রথম সারির নেতা হলেন শুভেন্দু। এদিন নন্দীগ্রাম কার্যত ভরে গিয়েছে শুভেন্দুর ছবি এবং বিজেপির পতাকা ব্যানারে। দলবদলের পর রাজ্য রাজনীতিতে আন্দোলনের আঁতুড়ঘর নন্দীগ্রামে প্রথম সভাকে স্মরণীয় করে রাখতে চান শুভেন্দু। সকাল থেকেই দেখা গিয়েছে হাতে বিজেপির পতাকা নিয়ে মিছিল করে সভাস্থলের দিকে যাচ্ছেন কর্মী-সমর্থকরা। মুখে তাঁদের গায়ত্রী মন্ত্র জপ। পুরোদস্তুর আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া। সভাস্থলের ২ কিলোমিটার আগে থেকেই জনপ্লাবন। যেদিকে তাকানো যায় শুধু মানুষ আর মানুষ।
শুভেন্দুর সভামঞ্চে শহীদ পরিবারের লোকজনও রয়েছেন। এদিকে বিজেপির মিছিলের পাশাপাশি নন্দীগ্রামের সামশেরগঞ্জ তৃণমূলের বেশ কয়েকজন কর্মী সমর্থক পাল্টা মিছিল করেন। তাঁদের অভিযোগ বিজেপি সমর্থকরা তৃণমূলের পতাকা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্টার ছিড়ে দিয়েছে। সেই ঘটনা ঘিরে এলাকায় মৃদু উত্তেজনা দেখা দেয়। যদিও সেটা বড় আকার নেয়নি। সব মিলিয়ে এদিন নন্দীগ্রামে বিজেপির সভা ঘিরে পরতে পরতে ছিল একরাশ উত্তেজনা আর আবেগের স্পর্শ। একটু পরেই বক্তব্য রাখবেন শুভেন্দু। গতকাল লালগড়ের সভায় শুভেন্দুকে ঝাঁঝালো ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন তৃণমূল নেতা মদন মিত্র। এমনকি বলেছেন দল অনুমতি দিলে তিনি নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে চান। এবার শুভেন্দুর পাল্টা জবাব দেওয়ার পালা। মঞ্চ থেকে তিনি কি বার্তা দেন সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক মহল।