লাল কালিতে লেখা পোস্টার পরেছে জঙ্গলমহলে, কী লেখা সেই পোস্টারে? উদ্দেশ্য কে?

।। ময়ুখ বসু ।।
পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ে উত্তপ্ত হাওয়া হিন্দোলিত হতে শুরু করে দিয়েছে। জঙ্গলমহলেও দেখা দিয়েছে উত্তেজনার ভ্রুকুটি। এবারে লাল পোষ্টার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে জঙ্গলমহলে। ফলে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, একুশের ভোটের আগে রাজ্যের শাসক দলের উপর ঘরে বাইরে চাপ তৈরির বাতাবরন যেন ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে। জঙ্গলমহলের গোপীবল্লভপুর ২ নম্বর ব্লকের পেটবিন্ধি গ্রামে এবার প্রকাশ্যে পড়লো লাল কালির পোষ্টার। ছত্রধর মাহাতোর বিরোধীতায় পড়েছে এই পোষ্টার। স্থানীয় মানুষজনের দাবি, এই পোষ্টার মাওবাদী কায়দায় লাল কালিতে লেখা। ফলে এটা যে মাওবাদীদের কাজ তা মেনে নিয়েছেন বেশীরভাগ স্থানীয় মানুষই। তৃণমূলের বর্তমান রাজ্য সম্পাদক তথা প্রাক্তন পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারন কমিটির প্রাক্তন নেতা ছত্রধর মাহাতোর বিরোধীতা করে এই পোষ্টারে লেখা রয়েছে, সন্ত্রাসবাদী ছত্রধর মাহাতো, দূর দূর দূর হঠো।
টিএমসি নেতা গো ব্যাক। তবে এই পোষ্টার কে বা কারা লাগিয়েছে তা জানা না গেলেও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি এই পোষ্টার বিজেপির লোকজনই লাগিয়েছে। এদিকে এই পোষ্টার ঘিরে এলাকার মানুষের মধ্যে চাপা আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, জঙ্গলমহলের মাটিতে হয়তো ইতিউতি পদচারণা শুরু করে দিয়েছে মাওবাদীরা। এর আগেও বিক্ষিপ্তভাবে বেশ কয়েকবার এমন লাল কালির পোষ্টার পড়তে দেখা গিয়েছে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন স্থানে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারনা, রাজ্যে তৃণমূল সরকার গঠনের পর জঙ্গলমহলের মাটি থেকে ধীরে ধীরে পাততাড়ি গুটিয়ে নেয় মাওবাদীরা। ব্যাপক ধরপাকড়ের মুখে কোণঠাসা হয়ে মাওবাদী কার্যক্রম কার্যত বিলুপ্ত হয়ে যায় জঙ্গলমহল থেকে।
আরো পড়ুন :ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ভস্মীভূত ১২টি দোকান
তাহলে কেন এখন ফের পড়ছে লাল কালির পোষ্টার? যা বেশ ভাবিছে তুলছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলকে। তাহলে কি রাজ্যে তৃণমূলের শক্তি ক্ষয়ের ইঙ্গিত বুঝেই ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে মাওবাদীরা? উঠছে প্রশ্ন। রাজনৈতিক মহলের আশংকা, যেভাবে লাল কালির পোষ্টারে তৃণমূল গো ব্যাক লেখা হয়েছে তাতে এই পোষ্টারের নেপথ্যে যদি মাওবাদীদের সক্রিয়তা থাকে তাহলে তা বেশ বিপদজনক বিষয়। কারণ, এই পোষ্টারের ভাষা বলে দিচ্ছে, তারা রাজ্যের শাসক দলের বিরোধী অবস্থান নিয়ে ফেলেছে। আর সেটা হলে জঙ্গলমহলে তৃণমূলের গুপ্ত শত্রু যে গোকুলে বেড়ে চলেছে তা পরিস্কার। পোষ্টারের শব্দব্রহ্ম বলছে, তৃণমূলে যোগ দেওয়া ছত্রধর মাহাতোকেও মানতে পারছে না তারা।
এমনটা ঘটলে জঙ্গলমহলের মাটিতে জঙ্গল পুলিশের ভয়ে মানুষ কতোটা তৃণমূলের ছত্রতলে এসে দাড়াবেন তা নিয়ে ধন্দ থেকেই যাচ্ছে। যদিও ছত্রধর মাহাতো এই ঘটনায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, খুনীদের ও নারী ধর্ষনকারীদের মানুষ ভালো ভাবেই চিনে গিয়েছেন। বিশেষ করে জঙ্গলমহলের মানুষ ভালো ভাবেই চিনে গিয়েছেন। ২০২১ সালের নির্বাচনে এর উত্তর দিয়ে দেবেন মানুষ। ছত্রধর বলেন, ওরা যতোই ভেক ধরুক, লাল ছেড়ে গেরুয়াতে আসুক, মানুষ ওদের চিনতে ভুল করেনি। ওরা জঙ্গলমহলের মানুষকে বোকা ভেবে থাকলে জঙ্গলমহলের মানুষই জবাবটা দিয়ে দেবেন ২০২১ সালে। স্বাভাবিকভাবেই ছত্রধরের এই মন্তব্য তীর্ষকভাবে গেরুয়া শিবিরকে যে কটাক্ষ করছে তা স্পষ্ট। তবে আদপে এই লাল কালির পোষ্টারের নেপথ্যে কি রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তা নিয়ে জঙ্গলমহলে কিন্ত দেখা দিয়েছে উত্তেজনার ভ্রুকুটি।