Lata Mangeshkar: ‘হেমা’ থেকে ‘লতা মঙ্গেশকর’ হলেন কীভাবে? প্রয়াণ দিবসে স্মরণে ‘নাইটিঙ্গেল’

।। প্রথম কলকাতা ।।

Lata Mangeshkar: সঙ্গীত জগতে তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর সুরের জাদুতে মুর্ছা গিয়েছে সবাই। অদ্ভুত মায়া জড়ানো কণ্ঠ ছিল তাঁর। দেশাত্মবোধের কন্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষাতে ও বিদেশি ভাষায় গান গাওয়ার একমাত্র রেকর্ড তাঁরই। তিনি এমন এমন গান গেয়েছেন যে, দাদাসাহেব ফালকে থেকে শুরু করে পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ২০২২-এর আজকের দিনে সঙ্গীত দুনিয়া হারিয়েছে তার সর্বশ্রেষ্ঠ নক্ষত্রকে। তবে আজও সকলের হৃদয়ে রয়ে গিয়েছেন লতা মঙ্গেশকর।

মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্ম তাঁর। বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর একজন মারাঠি ও কোঙ্কিণীর সঙ্গীতজ্ঞ ও মঞ্চ অভিনেতা ছিলেন। জন্মের পর বাবা-মা নাম রেখেছিলেন হেমা। পরে তাঁর নাম হয়েছে লতা। কিন্তু কীভাবে তা জানা আছে? বাবার ‘ভববন্ধন’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। যেখানে একটি নারী চরিত্রের নাম ছিল ‘লতিকা’। লতাজির বাবার সেই নামটি বেশ পছন্দ হয় এবং তিনি দ্রুত নিজের মেয়ের নাম ‘হেমা’ থেকে পরিবর্তন করে ‘লতা’ রাখেন। যাঁকে আজ সারা বিশ্ব চেনে লতা মঙ্গেশকর নামে। সঙ্গীতের দুনিয়ার একটি বড় নাম লতা মঙ্গেশকর। তাঁকে সবাই দেবী মনে করেন। তিনি মানেই কোকিলকন্ঠী‌। তাঁর বাড়িতে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পরিবেশ থাকলেও, হিন্দি ছায়াছবির গানের প্রথম সুপারস্টার কুন্দনলাল সায়গল ছাড়া আর কোনও শিল্পীর গান শোনার অনুমতি ছিল না। যার ফলে সায়গলের ভক্ত হয়ে ওঠেন লতা। প্রথম যেদিন রেডিও কিনেছিলেন, সেদিনই পেলেন পছন্দের সায়গলের মৃত্যুসংবাদ। দোকানে ফেরত দিয়ে এসেছিলেন রেডিও। তাঁর প্রথম উপার্জন ছিল ২৫ টাকা।

১৯৪২-এ তাঁর কাছে সুযোগ আসে মারাঠি ছবি ‘কিটি হাসাল’-এ গান গাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু গানটি ছবি থেকে বাদ পড়ে যায়। ১৯৪৩-এ তাঁর গাওয়া প্রথম হিন্দি গানটিও মারাঠি ছবির। ভেন্ডিবাজার ঘরানার সঙ্গীতকার উস্তাদ আমানত আলি খানের কাছে হিন্দুস্থানি মার্গসঙ্গীতের তালিম নিয়েছেন তিনি। তাঁকে সাহায্য করেছেন পারিবারিক বন্ধু এবং নবযুগ চিত্রপট সিনেমা কোম্পানির মালিক বিনায়ক দামোদর। গানকে পেশা বানাতে লতাজিকে সাহায্য করেছেন এই ব্যক্তিত্ব। ১৯৪৬-এ বিনায়কের ছবিতে কাজ করতে গিয়ে এই প্রবাদপ্রতীম গায়িকার পরিচয় হয় সঙ্গীত পরিচালক বসন্ত দেশাইয়ের সঙ্গে। বেশ কিছুদিন তালিম নিয়েছেন তুলসীদাস শর্মার কাছে। ১৯৪৯-এ কর্মচন্দ প্রকাশের ‘মহল’ ছবিতে তাঁর গাওয়া ‘আয়েগা আনেওয়ালা’ শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা পায়। পঞ্চাশের দশকে শচীন দেব বর্মণ, নৌশাদ আলি, সি রামচন্দ্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরীর মতো সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন।

৯০-এর দশকেও আনন্দ-মিলিন্দ, যতীন-ললিত, অনু মালিক, উত্তর সিংহ থেকে শুরু করে এ আর রহমানের মত লোকেদের সঙ্গে কাজ করেছেন। ২০১২-তে নিজের সংস্থা থেকে প্রকাশ করেন ভজনের অ্যালবাম। যেখানে তাঁর সঙ্গে গেয়েছেন বোন উষা মঙ্গেশকর। তাঁর গানের সংখ্যা বহু, তাঁকে দিয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীত রেকর্ড করিয়েছিলেন হেমন্ত। ২০০৭-এ ফ্রান্স সরকার তাঁকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা লেজিওঁ দনরের অফিসার খেতাবে ভূষিত করেছে। এছাড়া ফিল্মফেয়ার পুরস্কার সহ আরও নানা সম্মাননায় সম্মানিত করা হয়েছে তাঁকে। ১৯৭৪-এ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গান রেকর্ড করার জন্য গিনেস বুক অফ রেকর্ডে তাঁর নাম ওঠে। ২০০০ সালে আই আই এফ লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তাঁর কালজয়ী গানগুলি আজও মানুষের মনে বাঁচিয়ে রেখেছে তাঁকে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version