।। প্রথম কলকাতা ।।
President of Iran: আসছে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট। ভয় ধরাবে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের বুকে! তাই কি, এখন ইরান একদম চুপ? তলে তলে সামরিক শক্তিতে আরো দুর্ধর্ষ হয়ে উঠছে দেশটা। শত্রুপক্ষকে মোক্ষম জবাব দিতে কতটা প্রস্তুত তেহরান? কয়েক মাস পরেই আমুল বদলে যাবে ইরান। আর পরনির্ভরশীলতা নয়। কোন স্ট্র্যাটেজিতে ইরান মাত দিতে চলেছে? ভবিষ্যতের জন্য আলি খামেনির মারাত্মক প্ল্যান। মধ্যপ্রাচ্যের বড় ঝড়ের আশঙ্কা। ইসরায়েল আর তার মিত্ররা এই ইরান ঝড় সামলাতে পারবে তো? এবার শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বকে টার্গেট করতে চলেছে ইরান।
নতুন প্রেসিডেন্ট ইরানকে আমুল বদলে দিতে পারে। রাইসি যে ভুলগুলো করেছিলেন, সেই ভুল থেকে কিন্তু ইরান এবার শিক্ষা নিতে পুরোদমে প্রস্তুত। কূটনৈতিক মহলের ধারণা, প্রযুক্তিতে হয়ত আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নয়, এবার ইরান নির্ভর করবে নিজের প্রযুক্তির উপর। সহজ কথায়, যে দেশটায় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় একজন দক্ষ শক্তিশালী প্রেসিডেন্টকে হারালো, সেই দেশ আর কখনোই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কোন রকম ফাঁকফোঁকর রাখতে চাইবে না। এটাই স্বাভাবিক। ইরান নিজেকে গোটা বিশ্বের কাছে আরো শক্তিধর করে তুলতে মরিয়া। ধীরে ধীরে বিশ্বের কাছে কিন্তু ইরানের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।
ইরানের খোলাখুলি হুমকি, যে কারণে ভয় পাচ্ছে ইসরায়েল
একদিকে যখন ধিকে ধিকে বাড়ছে ইরানের শত্রু সংখ্যা, অপরদিকে ইরানও সেই শত্রুদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য তলে তলে নিজের শক্তি বাড়িয়ে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ইসরায়েল কাছে হয়তো একদিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে ইরান। এমনটাই ধারণা আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের। দেখুন, মধ্যপ্রাচ্যে যতগুলো মুসলিম দেশ রয়েছে, তার মধ্যে সব থেকে বেশি শক্তিশালী বলে মনে করা হয় ইরানকে। দেশটির পেট্রোলিয়াম রপ্তানির ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পেট্রোলিয়াম মজুদকারী দেশ ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ১৭টি দেশের মধ্যে ইরানের আলাদাই কদর। আর তাই হয়ত ধীরে ধীরে দেশটা চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে পশ্চিমাদের কাছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত, কিন্তু ইরানের ক্ষমতা নিয়ে পশ্চিমারা খুব একটা ভয় পেত না। পরাশক্তিগুলোর নজর বদলাতে শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। যখন এক ধাক্কায় জিডিপি বেড়ে যায় ইরানের। বিশেষ করে ইসলামী বিপ্লব ইরানে এনেছে উন্নতির ঝড়।
তারপর থেকে দেশটাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। না নিজে কাউকে সমঝে চলে, না কাউকে পাত্তা দেয়। যেটা মনে করে সেটাই করে ইরান। কয়েক মাস আগে ইসরায়েলে হামলা করে বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ব্যালেস্টিক মিসাইলে ঠিক কতটা শক্তিধর। একটু খেয়াল করে দেখবেন, তারপর থেকে কিন্তু ইসরায়েল এখনো পর্যন্ত ইরানের উপর বড় কোনও হামলা করেনি। হয়তো বা করার সাহস পাইনি। কারণ একটাই, ইরানের উপর হামলা করলে পাল্টা হামলা আসবে। তখন বেঁধে যেতে পারে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। এমনি থেকে ইসরায়েলের চারিদিকে রয়েছে শত্রুদের ঘেরাটোপ। তার মাঝে যদি মধ্যপ্রাচ্যে হঠাৎ করে ইরান যুদ্ধ ঘোষণা করে, তখন বেসামাল হয়ে পড়তে পারে ইসরায়েল। যদিও অস্ত্রশস্ত্র কিংবা প্রযুক্তিগত দিক থেকে ইসরায়েলও কিন্তু প্রচন্ড শক্তিধর একটা দেশ। উপরন্তু দেশটার পাশে আছে পশ্চিমা মিত্ররা। অপরদিকে কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বর্তমানে ইরান যেন আরো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। কারণ দেশটা নতুন প্রেসিডেন্ট পেতে চলেছে। সাম্প্রতি কয়েক মাস হল, রাইসির মৃত্যুর পর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য উত্তেজনা কিংবা সংঘাতের দিকে ইরান খুব একটা নজর দিচ্ছে না বলা ভালো নজর দিচ্ছে, কিন্তু প্রকাশ্যে কিছু বলছে না। কারণ একটাই, দেশটা হয়ত তাদের চারিদিকের পরিস্থিতি বুঝে নিতে চাইছে।
তারপর বড় বড় পদক্ষেপ গুলো নেবে তাদের নতুন প্রেসিডেন্ট। হয়ত বা তলে তলে কষে ফেলেছে ভূরাজনীতির সমস্ত রকম ছক। ইরান কিন্তু ইসরায়েল সহ তার মিত্র রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বকে আহ্বান জানিয়েছে। রীতিমত খোলাখুলি হুমকি দিয়ে বলেছে, যদি ফিলিস্তিন লেবানন আর সিরিয়াকে বৈদেশিক দখল থেকে মুক্ত করা না যায়, তাহলে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক স্বাধীনতা বলে আর কিছুই থাকবে না। আণবিক শক্তি সম্মেলনে ইরানের আণবিক সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন, ইরান বিশ্বের কোন আগ্রাসী শক্তিকে বিন্দুমাত্র ভয় পায় না। তারা বিশ্বের যে কোন আগ্রাসী শক্তির মোকাবিলায় প্রস্তুত। আর তাই হয়ত, ইসরায়েল ইরানের উপর জোরালো পদক্ষেপ নিতে দুবার হলেও ভাবছে। ইরান পদে পদে বুঝিয়ে দিচ্ছে, তারা সমস্ত বাধা ডিঙাতে এবং নতুন বৈজ্ঞানিক যাত্রা শুরু করতে জোরকদমে প্রস্তুতি চালাচ্ছে।
ইরানের আসল জোর ক্ষেপণাস্ত্রে, টক্কর দিচ্ছে পশ্চিমাদের সাথে
ইরান কিন্তু আঞ্চলিক সহ গোটা পশ্চিমি দুনিয়ার পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছে। ইরানের হাতে এমন কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আছে যা মুহূর্তে ঘায়েল করতে পারে শত্রুপক্ষকে। যেখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য খেইবার শেকান, সেজ্জিলের নাম। বলা হয়ে থাকে, এই দুটো অস্ত্র নাকি ইরানের ভাঁড়ারে থাকা দুটো মারাত্মক অস্ত্র। যার কারণে ইরানকে শত্রুপক্ষ সমঝে চলে। যদি খেইবার শেকানের কথা বলা হয়, প্রায় ৬০০০ কিলোমিটার বেগে শত্রুপক্ষের উপর হামলা করা এই মিসাইল যে কোন মুহূর্ত তার লক্ষ্য ঘুরিয়ে দিতে পারে। প্রায় ১৭ হাজার কিলোমিটার বেগে প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করতে পারে সেজ্জিল। সর্বাত্মক দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে প্রায় সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার। অর্থাৎ ইরান কিন্তু চাইলেই ইসরায়েলের ভিতরে আক্রমণ করতে পারে। অপরদিকে রয়েছে, শাহাব ৩ মতো ক্ষেপণাস্ত্র, যাকে উন্নত করতে ইরান একের পর এক প্রযুক্তি যোগ করেই চলেছে। আর গদরের নাম তো শুনেইছেন, অত্যন্ত দ্রুত গতির। এর পরেই আসে এমাদের নাম। যেটা প্রয়োজনে বদলে দিতে পারে ক্ষেপণাস্ত্রের দিশা।
শুধু তাই নয়, শোনা যায় ইরানের কাছে নাকি রয়েছে শব্দের চেয়ে প্রায় আট গুণ বেশি গতির ক্ষেপণাস্ত্র। তবে ইরানের ভাঁড়ারে যতই অস্ত্র থাক না কেন, কয়েক দশক ধরে ক্রমবর্ধমান হারে স্থানীয় সক্ষমতার উপর একটু বেশি জোর দিচ্ছে। আরো শক্তিতে বলিয়ান করে তুলছে সামরিক খাতকে। আসলে তেহরান বুঝে গিয়েছে, তার সামরিক শক্তি না বাড়ালেই নয়। তাই আকাশ পথ এখন ইরানের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধবিমানের কথা বললেই, ইরান মোটামুটি ভাবে এখনো ব্যবহার করে রাশিয়া নির্মিত সুখোই আর মিগ। আর দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে, ইরানের কাছে আছে মারাত্মক শক্তিশালী বাভার ৩৭৩। যা ইরান এখনো পর্যন্ত ব্যবহার করেনি। তবে প্রয়োজনে যে ব্যবহার করবেন না এমনটা কিন্তু নয়। নিজেকে শক্তিশালী করতে ইতিমধ্যেই গহীন পার্বত্য অঞ্চলে ইরান গড়ে তুলেছে বিমান ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্রের গুদাম সহ আণবিক শক্তির স্থাপনা। যদিও বহু আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, পশ্চিমা দেশগুলোর ক্ষেপণাস্ত্রের মত প্রযুক্তিগত দিক থেকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো অতটাও নিখুঁত নয়। তবে আঘাত হেনে সেগুলো ক্ষতি করার জন্য যথেষ্ট। ড্রোন থেকে শুরু করে ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সব ক্ষেত্রেই যেন এখন দুর্বার গতিতে চলেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের বারবার আরোপিত নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি দিয়ে সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করছে তারা। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের পর থেকেই কিন্তু ইরানকে নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যার অন্যতম কারণ রাশিয়ার পিছনে নাকি রয়েছে ইরানের প্রদত্ত সামরিক সহায়তা।
ইরানকে আমুল বদলে দেবে নতুন প্রেসিডেন্ট, পাবে খামেনির ক্ষমতা?
এবার আসা যাক সেই বড় প্রশ্নে। ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট ইরানের ক্ষেত্রে ঠিক কোন কোন পরিবর্তন আনবে। যতটা ভাবা হচ্ছে ততটা পরিবর্তন কি আদৌ আনতে পারবেন? দেখুন, দেশটার অতীত অভিজ্ঞতা বলছে ইরানের শাসন ব্যবস্থার দিক থেকে যিনি প্রেসিডেন্ট হন তার হাতে কিন্তু সার্বিক ক্ষমতা থাকে না। পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করেন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এবং তার অধীনে থাকা সমস্ত শক্তিশালী সংস্থাগুলো। আয়াতুল্লাহু আলি খামেনি যতক্ষণ না চাইবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ইরানের রাষ্ট্রীয় এবং বিদেশ নীতিতে খুব একটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ইরানের আণবিক শক্তি গবেষণা নিয়ে চিন্তা করা বা ইরান-ইসরায়েলের সম্পর্ক নিয়ে যে বিদেশ নীতি সে ক্ষেত্রে পুরো দায়ভার কিন্তু নতুন প্রেসিডেন্টের হাতে থাকবে না। আলি খামেনি যেভাবে ইরানের উপর এতদিন কর্তৃত্ব বজায় রেখেছিলেন ঠিক সেভাবেই বজায় রাখবেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও এটা বলা বাহুল্য, রাইসির মৃত্যু ইরানের কাছে একটা বড় ধাক্কা। যে ধাক্কা থেকে ইরান একের পর এক শিক্ষা নিয়ে চলেছে।
সাম্প্রতিক সময় কর্মকাণ্ডই বলে দিচ্ছে, ইরান আর পুরনো নীতিতে চলছে না। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে নিজেকে মধ্যপ্রাচ্য সহ গোটা বিশ্বে নিজেকে শক্তিশালী হিসেবে জাহির করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সামরিক শক্তিই তো একটা দেশের বড় পরিচয়, আর সেই খাতে ঢালাও ব্যয় করে চলেছে দেশটা। তবে হ্যাঁ, যেহেতু খামেনির বয়স প্রায় ৮৫ বছর হয়ে গিয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাঁর জায়গায় কে আসবেন? শক্ত হাতে কে ধরবেন ইরানের হাল? এক্ষেত্রে ইরানের সংবিধান বলছে, সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা বাছাইয়ের দায়িত্ব রয়েছে বিশেষজ্ঞ অ্যাসেম্বলির উপর। আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু ইরানের প্রেসিডেন্টের কোন ভূমিকা থাকে না। কিন্তু যদি হঠাৎ কোনো কারণে সর্বোচ্চ নেতা মারা যান, সেক্ষেত্রে সেই অস্থির সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনে বড় ভূমিকা থাকে প্রেসিডেন্টের উপর। ইরানের সংবিধানও কিন্তু, সেই দায়িত্ব অর্পণ করে প্রেসিডেন্টেরও উপরই। তাই এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে, ভবিষ্যতে ইরানের প্রেসিডেন্ট কে হবে এটা একটা বড় প্রশ্ন। প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী তালিকা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়ে গিয়েছে। যেখানে রয়েছে মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ, আমিরহোসেন গাজিজাদে হাসেমি, সাঈদ জালিলি, মাসউদ পেজেশকিয়ান, মোস্তফা পুরমোহাম্মদী আর আলিরেজা জাকানির নাম। এনারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত দক্ষ, এবং ইরানের শাসন কাঠামোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। এবার দেখার এই ছয়জনের মধ্যে কে আসেন রাইসির জায়গায়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম