হাইকোর্টের রায় অমান্য, নোটিস নুসরত-সৃজিতকে

।। শর্মিলা মিত্র ।।
করোনা আবহ তার সঙ্গে জড়িত নতুন শব্দ নিউ নর্ম্যাল এই সবকিছুকে সঙ্গে নিয়ে পালিত হয়েছে ২০২০-র দুর্গাপুজো। তার সঙ্গে দোসর হয়েছে হাইকোর্টের রায়।
এই প্রথম হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ‘নো এন্ট্রি জোনে’ হয়েছে দুর্গাপুজো।
কিন্তু তাতেও পিছু ছাড়েনি বিতর্ক।
দুর্গা পুজো মণ্ডপে ‘নো এন্ট্রি’-র নির্দেশ সত্বেও অষ্টমীর দিন মণ্ডপে প্রবেশ করে অঞ্জলি দেওয়ার ঘটনায় বুধবার আইনি নোটিস দেওয়া হল অভিনেত্রী তথা সাংসদ নুসরত জাহান এবং পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে। নোটিস দেওয়া হচ্ছে রাজ্য পুলিশের ডিজিকেও।
প্রসঙ্গত, দুর্গাপুজোর আগে মণ্ডপে প্রবেশ প্রসঙ্গে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, মণ্ডপ বা নো এন্ট্রি জোনে পুজো উদ্যোক্তা, পুরোহিত ও ঢাকিরা ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। পাশাপাশি, পুজো উদ্যোক্তাদের প্রবেশের ক্ষেত্রেও সংখ্যা নির্ধারিত করে দিয়েছিল হাইকোর্ট। বড় পুজোর ক্ষেত্রে একসঙ্গে ৪৫ এবং ছোট পুজোর ক্ষেত্রে একসঙ্গে ১৫ জনের বেশি লোক মণ্ডপে প্রবেশ করতে পারবেনা বলেও আদালতের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া, পুজোর কোন দিন কারা কারা মণ্ডপে প্রবেশ করবেন সেই সংক্রান্ত তালিকা সকাল আটটার মধ্যে মণ্ডপে ঝোলানোর নির্দেশও দিয়েছিল আদালত।
আর এরপরও অষ্টমীর দিন কলকাতার একটি প্রথম সারির পুজোয় অঞ্জলি দিতে
দেখা যায় নুসরত ও তার স্বামী নিখিল জৈন এবং সৃজিত মুখোপাধ্যায় ও তার স্ত্রী মিথিলাকে।
এই ঘটনার পরই কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যে বা যারা অষ্টমীর সকালে মণ্ডপে প্রবেশ করে অঞ্জলি দিয়েছেন, তাদের সকলের বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন মামলাকারী অজয় কুমার দে-র আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। সেইমতো পুজো মিটতেই নোটিস পাঠানোর ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু করে দেন সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়।
এই বিষয়ে প্রথম কলকাতাকে তার ব্ক্তব্য হিসেবে আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় জানান,

।।নুসরত জাহানকে প্রশ্ন।।
নুসরত জাহান বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী,নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও বটে, তিনি এবছরটা নাইবা যেতে পারতেন সচেতন নাগরিক হিসাবে। তাঁর জনপ্রিয়তাকে তিনি ঘরে বসে মানুষকে আদালতের রায় সম্পর্কে সচেতন করতে পারতেন, কিছুই না করে তিনি তাঁর নিজের মত লাইভ অনুষ্ঠান করতে পারতেন।
আমি কখনই কে কি করল বলে প্রশ্ন তুলতাম না। নুসরত জাহান একজন সাংসদ। তাঁকে সংসদে প্রবেশকরে সত্য নিষ্ঠার সঙ্গে শপথ নিতে হয়েছে আইনদ্বারা সিদ্ধ ভারতের সংবিধানকে তিনি রক্ষা করবেন। তিনি কি মহামাণ্য কলকাতা উচ্চ ন্যায়ালয়ের রায়ের স্পিরিটের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো কাজ করতে পারেন,যা জনসমক্ষে এলে মানুষের কাছে আদালতের রায় সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌঁছায়?
উল্টো দিক দিয়ে দেখলে তিনি একজন জনপ্রতিনিধি, কিভাবে তিনি মন্ডপে ঢুকলেন যখন রাজ্যের বেশীর ভাগ মানুষই মন্ডপে ঢোকার,সারিবদ্ধ ভাবে পুষ্পাঞ্জলি দেবার ইচ্ছা ত্যাগ করলেন কভিড ১৯ জনিত কারনে হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকারের জারিকরা নির্দেশিকার কারনে, সর্বাগ্রে চলমান ভয়ানক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের সময়।এটা কি একজন জনপ্রতিনিধিকে মানায়? মানায় না।
একজন অভিনেত্রী হিসাবে তাঁর দক্ষতাকে প্রশ্ন করার অধিকার আমার নেই। একজন নাগরিক হিসাবে তাঁর রাজনীতি করা বা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার আমার নেই। আমি এই আমার সংবিধানের ১৪ ধারা অনুযায়ী এই ধরনের পিতৃতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী বৈষম্যেকে অন্তর থেকে ঘৃণা করি করি। আর ‘নুসরত দুর্গামন্ডপে প্রবেশ করবেনা’,’অঞ্জলি দেবেনা’ এটা যারা বলেন তাদের শুধু ঘৃণা নয়, রাজনৈতিক ধ্বংস কামনা করি।
কিন্তু নুসরত জাহান মোহদয়া যে রাজ্য থেকে নির্বাচিত সেই রাজ্যের একজন বাসিন্দা হয়ে তাঁকে এই প্রশ্ন করবার অধিকার তো আমার আছে? তাই না? দেখা যাক সেই অধিকার অনুসারে আমার এই প্রশ্নের উত্তর তিনি দেন কিনা সেটা দেখার।
প্রশ্নটা গণতন্ত্রের বৃহত্তর প্রশ্নের,দেশের আইনের শাসনের ভবিষ্যতের,স্বাস্থ্যের,বেঁচে থাকার।তাই দয়া করে কেউ ডাইলিউট করবেন না।
সব্যসাচী চ্যটার্জী।