শুভেন্দুর পর বিক্ষুব্ধ মিহিরকেও টোপ তৃণমূলের

।। শর্মিলা মিত্র ।।
বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই প্রকট হচ্ছে কোচবিহারের তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছবি।
সেই দ্বন্দ্বে মলম লাগাতে মঙ্গলবার সকালে কোচবিহারের দক্ষিণ কেন্দ্রের বিক্ষুব্ধ বিধায়ক মিহির গোস্বামীর মানভঞ্জন করতে তার বাড়ি পৌঁছে যান কোচবিহারের একদা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
একান্তে বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক করার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর পর থেকে মিহিরদার সঙ্গে দেখা হয়নি। তাই বিজয়া সম্মিলনী ও দীপাবলীর শুভেচ্ছা বিনিময় করতেই তিনি এসেছিলেন।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই মিহিরদা দলে যেভাবে আগে ছিলেন, সে ভাবেই থাকুন। উনি প্রবীণ নেতা। আমরা চাইব তিনি দলে থাকুন।”
এই প্রসঙ্গে মিহির গোস্বামীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ”তিনি যে জায়গাতে ছিলেন সেখানেই আছেন কোন অবস্থাতেই তার পরিবর্তন হবে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট নিয়ে তিনি বলেন, তিনি যা লিখেছেন ঠিক লিখেছেন। তিনি মিথ্যা কথা বলেন না এবং তার কথার পরিবর্তন করেন না।”
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে কোচবিহারে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল চরম আকার নিয়েছে। এরপর, দলের জেলা কমিটির ঘোষণা হওয়ার পর দলের ব্লক ও জেলা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে কার্যত ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেন কোচবিহারের বর্ষীয়ান তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী। সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পাশাপাশি দলের সমস্ত সাংগঠনিক পদ থেকে নিজে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
আর এরপরই বিজেপির সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক তার বাড়িতে আসায় জল্পনা আরও বেড়ে যায়। এরপরও প্রশান্ত কিশোর ও তার টিমের বিরুদ্ধে স্যোশাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজের মনের কষ্ট প্রকাশ করেন মিহির গোস্বামী।
জানা যায় এসবের পরই উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, অনগ্রসর কল্যাণমন্ত্রী বিনয় কৃষ্ণা বর্মন ও জেলা সভাপতি পার্থ প্রতিম রায়কে কলকাতায় ডেকে মিহির গোস্বামীকে দলে ধরে রাখার বার্তা দেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর তারপরই মিহির গোস্বামীর অভিমান ভাঙাতে তার বাড়ি পৌঁছে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
এরই মধ্যে আবারও সোশ্যাল মিডিয়ায় কলকাতার নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন মিহির গোস্বামী। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, আজ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে তৃণমূলের উপরের তলার নেতা-মন্ত্রীরা সরব হয়েছে। কিন্তু তারাই এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বীজ বুনে দিয়েছেন। আজ আর জেলার নেতাদের ডেকে ধমক-ধামক দিলেই সব ঠিক হবে না। যা নিয়ে আবারও ঘণীভূত হয়েছে জল্পনা।
এই অবস্থায় মন্ত্রী বাড়িতে এলেও, মিহিরের তরফে অবশ্য বরফ গলার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে বা ভবিষ্যতে কী করব, তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছি।’’
এই কথা বলে তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী যে এখনও তার নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ ঝুলিয়ে রাখলেন তা বলাই বাহুল্য।