পুলিশ নিয়ে মমতার হুঁশিয়ারির পর বিরোধীরা বলতেই পারেন, ” আপনি হারছেন ম্যাডাম”

।। প্রথম কলকাতা ।।
একুশের নির্বাচনে তৃণমূল কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছে। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা ভাল করেই জানেন। আর এটা অনেক আগে আন্দাজ করে বছর দুয়েক আগে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের শরণাপন্ন হয়েছেন তাঁরা। কিন্তু নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর মমতার একাধিক কার্যকলাপ, রাজনৈতিক বক্তব্যে লাভবান হয়েছে বিরোধীরা। সকলেই জানেন মমতা মেপে কথা বলতে পারেন না। তাই বুধবার কোচবিহারের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর একাংশকে নিশানা করেছেন, তাতে নির্বাচনে তৃণমূল কতটা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, সেটা নতুন করে আরও বেশি প্রকট হয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা মমতার হাতেই রয়েছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর। সেখানে তিনি সরাসরি আরামবাগ থানার ওসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। নির্বাচনের সময় রাজ্য পুলিশের একাংশ বিজেপির হয়ে কাজ করছে, এই অভিযোগ সরাসরি করছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মহিলারা ঘিরে ধরুন, এমন আবেদন জানাচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোট কী মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন না? কারণ কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া তিনটি পর্যায়ের নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে।
মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের একটি বুথে দশ বছর পর ভোট দিতে পারলেন এক মহিলা। এটা নিঃসন্দেহে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে অত্যন্ত ভাল বিজ্ঞাপন হতে পারত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, তাতে অন্য প্রসঙ্গগুলি অনেক বেশি মাত্রায় প্রাসঙ্গিক হয়েছে। মঙ্গলবার নির্বাচনের পর রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, অতীতে দেখা গিয়েছে নির্বাচনের দিন শেষবেলায় বুথে ঢুকে তাণ্ডব চালাত দুষ্কৃতীরা। তাঁর দাবি ব্যাপক নিরাপত্তার কারণে সেটা এবার করা সম্ভব হয়নি।
আরো পড়ুন : উলুবেড়িয়ার ঘটনায় ভিডিও বার্তায় তদন্তের আবেদন জয়প্রকাশ মজুমদারের
রাজ্যের অতীতের পরিসংখ্যান বলছে, বহু বুথে একশো শতাংশ ভোট পড়ত। ব্যাপক রিগিং বা ছাপ্পা ভোট ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। মঙ্গলবার নির্বাচনের দিন দেখা গিয়েছে তৃণমূলের দাপুটে নেতা তথা ক্যানিং পূর্বের প্রার্থী শওকত মোল্লা আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে পথ অবরোধ করছেন। এই ঘটনায় হতবাক সবাই। তবে কী তৃণমূল বুথ দখল করতে পারছে না বলে তারা এত বেশি সোচ্চার হয়েছে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে? এই প্রশ্ন রাজ্যে ভোট প্রচারে এসে করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডাসহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
তৃণমূল বিরোধীরা এই ইস্যুতে একইভাবে সোচ্চার হয়েছেন। সিপিএম জমানার অ্যাকশন রিপ্লে দেখা যাচ্ছে বর্তমানে। বামেরা তখন এভাবেই সরব হয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বড় কথা মমতা নিজের রাজ্যের পুলিশের ওপর ভরসা করতে পারছেন না। মমতা যে ভঙ্গিতে কোচবিহারের জনসভায় রাজ্য পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, তাতে মনে হয়েছে তিনি নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশের “সহযোগিতা” চাইছেন।
আর সেটা না পেয়েই তিনি সোচ্চার হয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং পুলিশের বিরুদ্ধে। বলাবাহুল্য বিষয়টি নিয়ে আসরে নেমে পড়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। এদিনই নির্বাচন কমিশনের কাছে বিষয়টি নিয়ে তাঁরা দরবার করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে “সেন্সর” করার দাবি পর্যন্ত জানিয়েছেন তাঁরা। তাই সবমিলিয়ে দিনের শেষে বিরোধীরা বলতেই পারেন, “আপনি হারছেন ম্যাডাম”।