স্বদেশী আন্দোলনে ঝড় তুলেছিল ভারতমাতার ছবি, কবিগুরুর বিশ্বস্ত সৈনিক অবনীন্দ্রনাথ

।। প্রথম কলকাতা ।।
ভারতীয় শিল্পী মহলে বিশাল পটপরিবর্তন ঘটেছিল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে। এককথায় তিনি ছিলেন প্রথম শিল্পী যিনি ভারতের চিত্রকলায় নবজাগরণ ঘটান। শুধু চিত্রশিল্পী নন তিনি শিশুদের জন্য প্রচুর লেখালেখি করেছেন। এছাড়াও তাঁর শিল্পে ফুটে উঠেছিল স্বদেশী মূল্যবোধ। তাঁর হাতে আঁকা ভারতমাতা ছবিটি হয়ে উঠেছিল দেশমাতার আদর্শ রূপ। এই ছবিটি স্বদেশী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতীক হয়ে উঠেছিল। জীবনের উপকন্ঠে এসে অনুভব করেছিলেন, শিল্পীর জীবন দুঃখের। তাঁর জীবনের দুঃখের রচনাগুলি ক্যানভাসে সুন্দরভাবে রং তুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। তাঁর ছবিগুলি আজও বিশ্ব বিখ্যাত। ১৮৭১ সালে ৭ই আগস্ট জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভাবলে অবাক হবেন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু শিল্পী ছিলেন না, ছিলেন অদ্ভুত রন্ধন পদ্ধতির উদ্ভাবকও।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে সারা বাংলার মানুষ রীতিমত প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিলেন। আর সেই আগুনের আঁচে জোরালো হয়ে ওঠে স্বদেশী আন্দোলন। এমন পরিস্থিতিতে অবনীন্দ্রনাথের শিল্পী মনে ফুটে ওঠে ভারতমাতার ছবি। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবে কাজ করেছিলেন। তিনি ছিলেন কবিগুরুর ভাইপো। প্রথমে সেই পরিস্থিতিতে এঁকেছিলেন বঙ্গমাতার ছবি। পরবর্তীকালে সেই নাম বদলে রাখা হয় ভারতমাতা। যেখানে চতুর্ভূজা যোগিনী মূর্তির দেবী রয়েছেন গেরুয়া বসনে। দেবীর হাতে রয়েছে অন্ন, বস্ত্র, পুঁথি আর জপমালা। সেই ভারত মাতার ছবিটিকে বড় করে জাপানি আর্টিস্ট টাইকান একটি পতাকা বানিয়ে দিয়েছিলেন। সেই পতাকা ঘাড়ে করে কবিগুরু সেই সময় গান গেয়ে গেয়ে ঘুরেছিলেন চোরাবাগানে।
১৯০৫ সালে বাংলাকে রীতিমত দু-টুকরো করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ব্রিটিশ শাসকগণ। এই চরম রাজনৈতিক সংকটে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে আঁকা ছবি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেই সময় দাঁড়িয়ে শিল্পী-সাহিত্যিক মহল থেকে প্রতিবাদের আওয়াজ উঠে এসেছে। এই বঙ্গমাতা হলেন শিক্ষা, অন্ন, বস্ত্র সবকিছুর দিক থেকেই সমৃদ্ধ। এভাবেই জাগিয়ে তোলা হয়েছিল বাঙালিকে। বহু শিল্পী সেই দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতমাতার নতুন নতুন রূপ আঁকতে শুরু করেন। খুব দ্রুত ভারতবর্ষের জাতীয়তাবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছিল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই ছবি। আসলে স্বদেশীরা সেদিন এই ছবিকে আপন করে নিয়েছিলেন।
ছোটবেলায় এতই দুষ্টু ছিলেন যে ঠাকুর বাড়ির সবাই অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বোম্বেটে বলে ডাকতেন। ঠাকুর বাড়ির বারান্দার টবে ছিল কতগুলি লাল মাছ। ছোট্ট অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনে হয়েছিল লাল মাছ থাকবে লাল জলে। তাই তিনি লাল রং টবের জলে দিয়ে দেন। মারা যায় মাছগুলি । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আদর করে তাঁর ভাইপোকে তাই বলতেন চির পাগলা। জেদি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত ভয় পেতেন। লন্ডনের ‘ স্টুডিও’ পত্রিকায় তাঁর চিত্রলোচনা প্রকাশিত হবার পরেই , তিনি পৌঁছে যান খ্যাতির শীর্ষে। ইতালির নামজাদা শিল্পী ছিলেন তাঁর শিক্ষক। শিখেছিলেন ড্রইং প্যাস্টেল ও জল রঙ। একের পর এক সৃষ্টি করেছিলেন ‘বুদ্ধ ও সুজাতা’ , ‘ শেষ যাত্রা ‘ , ‘কচ দেবযানী’র মত চিত্রকলা। জাপানি শিল্পের প্রভাবে অঙ্কন করেছিলেন ‘ওমর খৈয়াম’। কিন্তু তাঁর জীবন খুব একটা সুখের ছিল না। প্লেগ রোগ মেয়ে উমাকে কেড়ে নিয়েছিল। শোক ভুলতে পুষেছিলেন পাখি। সব সময় ভালবাসতেন একা থাকতে। তাই হয়ত তিনি বলে গেছেন, শিল্পীর জীবন বড় দুঃখের।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম