২০২১ বিধানসভা ভোট , গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাই ঘাম ঝরাবে শাসকের

।। ময়ুখ বসু ।।
রাজ্যে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। শহর কলকাতা থেকে জেলার প্রতিটি বিধানসভা গুলিতে শুরু হয়ে গিয়েছে জোর রাজনৈতিক তৎপরতা। আমাদের নজরে রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র। কোন কেন্দ্রে কি হতে পারে, কোন কেন্দ্রে রাজনৈতিক হাওয়া কোন দিকে ঘুরছে তার প্রতিটি মূহুর্তের খবর পেতে আমরা সক্রিয়। আর সেই রাজনৈতিক হাওয়ার হাল হাকিকত নিয়েই আমাদের এই প্রতিবেদন।
আজকের বিধানসভা কেন্দ্র দার্জিলিং বিধানসভা কেন্দ্র। দার্জিলিং পৌরসভা, দার্জিলিং পুলবাজার সিডি ব্লক, ধুতরিয়া কলেজ ভ্যালি, ঘুম খাসমহল, সুখিয়া সিমানা, রঙ ভাং গোপালধারা, পোখরিবং ১, পোখরিবং ২, পোখরিবং ৩, লিঙ্গিয়া মারায়েবং, পেরামগুড়ি তামসং, প্লাংডাং, রংবুলি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং জোড়বাংলো সুখিয়াপোখরি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক নিয়ে এই দার্জিলিং বিধানসভা কেন্দ্রটি গঠিত। ১৯৫১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই কেন্দ্রে অখিল ভারতীয় গোর্খা লীগ, সিপিএম, গোর্খা ন্যাশানাল লিবারেশন ফ্রন্ট এবং গোর্খা জনিমুক্তি মোর্চা ক্ষমতা দখল করে।
২০১১ সালে এই কেন্দ্রে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ত্রিলোক দেওয়ান ১ লক্ষ ২০ হাজার ৫৩২ ভোটে জয়ী হন। তিনি পান ৭৮,৫০ শতাংশ ভোট। ওই বছর এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রতিযোগীতার খাতা খুলতে পারেনি। এরপর ২০১৬ সালে এই দার্জিলিং বিধানসভা কেন্দ্রে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অমর সিং রাই ৯৫ হাজার ৩৮৬ ভোটে জয়ী হন। তিনি পান ৫৯,৮৫ শতাংশ ভোট। এই ২০১৬ সালে এসে এই কেন্দ্রে রীতিমতো চমক লাগিয়ে দেয় তৃণমূল কংগ্রেস।
তৃণমূল প্রার্থী সারদা রাই সুব্বা ৪৫ হাজার ৪৭৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে। যা ছিলো ভোট শতাংশের ২৮,৫৩ শতাংশ। যার মানে এটা পরিষ্কার হয়ে যায়, গোর্খা শিবিরের একটা ভোট ব্যাংক তৃণমূল তাদের দিকে টেনে নিতে সক্ষম হয়। তবে পাহাড়ের বুকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নানা দাবি দাওয়া বরাবরই পাহাড়ের ভোটব্যাংককে বেঁধে রেখেছে তাদের নিজেদের দিকে। সেখানে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের উন্নয়নমুখী নানা প্রকল্প, পাহাড়কে সাজিয়ে গুছিয়ে দেওয়া এবং সরকারি নানা প্রকল্পের হাতছানি দেওয়া হলেও কার্যত গোর্খাদের বহু পুরনো দাবি দাওয়ার ক্ষেত্রে সেসব ধোপে টিকতে পারেনি।
আরো পড়ুন : ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন, মেঘলিগঞ্জে ঘটতে পারে বাম সূর্যোদয়
তার উপর পাহাড় নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন এখানকার ভোটারদের গোর্খাজনমুক্তি মোর্চার প্রতি বেশি করে আস্থাশীল করে তুলেছে। এর আগে একাধিকবার রাজ্যের শাসক দল পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে নানা আলোচনা করে পাহাড়ের সমস্যা কাটিয়ে তোলার রাস্তায় হাঁটলেও আদপে ভোট ব্যাংকে তেমন রদ বদল ঘটেনি। তবে ২০১৬ সালে এসে রাজ্যের শাসক দল যখন পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে টক্কর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে সেই সময়, প্রায় ২০ শতাংশের মতো ভোট কমে যায় গোর্খা শিবিরের।
ফলে আগামী ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই দার্জিলিং বিধানসভা কেন্দ্রে গোর্খাজনমুক্তি মোর্চার অন্দরে আস্থা এবং প্রতিশ্রুতির বাতাবরন তৈরি করে তৃণমূল যদি পাহাড়ের মানুষদের ভরসার জায়গা অর্জন করতে পারে সেক্ষেত্রে সমস্যা বাড়তে পারে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার। তবে আপাতভাবে এই কেন্দ্রে অ্যাডভান্টেজে রয়েছে গোর্খাজনুক্তি মোর্চাই।
গোর্খা শিবিরের একটা বড়ো অংশ যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে পাহাড়ের উন্নয়নকে পাখির চোখ করে এখানকার ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারেন তাহলে একুশের নির্বাচনে তৃণমূল পাহাড়ের ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখতেই পারে। তবে এক্ষেত্রে বিজেপি ঠিক কি রাজনৈতিক গেম খেলবে এবং পাহাড়বাসীকে রাজ্যের শাসকের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলার রাজনৈতিক ঘুটি চালে কি না তা নিয়েও রাজনৈতিক মহলের সন্দেহ কিন্ত থেকেই যাচ্ছে।