ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) ও বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)-এর মধ্যে দিল্লির বিএসএফ হেডকোয়ার্টারে চারদিনব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার বৈঠকের সমাপ্তি উপলক্ষে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন বিএসএফের ডিজি দলজিৎ সিং চৌধরি এবং বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল আসরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
বৈঠকে সীমান্তে অনুপ্রবেশ, উস্কানিমূলক কার্যকলাপ এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের মতো নানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিএসএফের দাবি, আগস্টের পর থেকে সীমান্তে অনুপ্রবেশের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে, বিজিবি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার যে খবর ছড়িয়েছে, তা অনেকাংশেই ভুল ব্যাখ্যা। বিজিবির ডিজি জানান, “গত বছর দুর্গাপূজা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্মিলিতভাবে কাজ করেছে। যে কটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো ধর্মীয় নয়, বরং রাজনৈতিক কারণেই ঘটেছে।”
বিএসএফ অভিযোগ তুলেছে, সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া বসানোর সময় তারা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। একইসঙ্গে, বিজিবির বিরুদ্ধে নো ম্যান্স ল্যান্ডে অবৈধ বাঙ্কার নির্মাণেরও অভিযোগ করা হয়েছে। বিজিবি এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, ১৫০ ইয়ার্ডের মধ্যে কোনো স্থায়ী পরিকাঠামো নির্মাণের তথ্য সঠিক নয় এবং উভয় পক্ষের সম্মতিতেই উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। এ বিষয়ে বিজিবির ডিজি বলেন, “আমরা সবসময় উন্নয়নমূলক কাজের পক্ষে। উভয় দেশের পারস্পরিক মতামত নিয়ে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও যৌথ উদ্যোগে কাজ করা হবে।”
বিএসএফ ডিজি দলজিৎ সিং চৌধরি জানান, ভারতীয় সীমান্তে অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের তরফ থেকে বিজিবিকে কখনও আক্রমণ করা হয়নি, বরং আমরা পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই।” অন্যদিকে, বিজিবির তরফ থেকে বলা হয়, তারা কখনও বিএসএফ সদস্যদের উপর হামলা চালায়নি। বিজিবি ডিজির ভাষায়, “কিছু দুষ্কৃতকারী আমাদের সীমানায় প্রবেশের চেষ্টা করেছিল, আমরা কেবল আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করা হয়নি।”
চারদিনের এই বৈঠকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ভবিষ্যতে উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে আরও কার্যকর সমন্বয় তৈরি করা। বিজিবি ও বিএসএফ একমত হয়েছে যে, সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যৌথ প্রচেষ্টা আরও জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি, স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যৌথ টহল ও গোয়েন্দা তথ্যের আদান-প্রদানের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।বৈঠকের শেষে উভয় দেশের বাহিনীর প্রধানরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, ভবিষ্যতে সীমান্তে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দুই দেশ আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। বিজিবি ডিজি বলেন, “আমাদের কূটনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা আরও মজবুত করতে হবে যাতে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে।”
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিভিন্ন সময়ে নানা সমস্যা দেখা দিলেও, উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী কূটনৈতিকভাবে তা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত চারদিনের বৈঠকের মাধ্যমে সীমান্তে চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। উভয় পক্ষই নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে এবং ভবিষ্যতে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা আরও মজবুত করার আশ্বাস দিয়েছে। এই বৈঠকের মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্ত সম্পর্কের নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে, যা আগামীতে দুই দেশের কূটনৈতিক ও সামরিক সমন্বয়ের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।