মহাকুম্ভের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করল বাংলাদেশ। গৌড়ীয় নৃত্যের ছয়জন শিল্পী ভারতের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে উপস্থিত হলেন প্রয়াগরাজের পবিত্র কুম্ভমেলায়। যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে অনুষ্ঠিত এই মহাযজ্ঞে বাংলাদেশের শিল্পীরা পরিবেশন করলেন বৈষ্ণবীয় ঘরানার নৃত্য, যা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কুম্ভমেলার ৩ নম্বর সেক্টরের গঙ্গা প্যান্ডেলে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন এই শিল্পীরা। তাঁদের বার্তা ছিল— গোটা পৃথিবীই একটি পরিবার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নন্দগোপাল গুপ্তা, আইসিসিআর-এর ডাইরেক্টর জেনারেল কে. এন. নন্দিনী শ্রীংলা সহ আরও বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
১৩ জানুয়ারি পৌষ পূর্ণিমার দিন থেকে শুরু হওয়া মহাকুম্ভ চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি শিবরাত্রি পর্যন্ত। এবারের কুম্ভমেলা বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত হয়েছে, বিশেষত একাধিক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এই পরিস্থিতিতে আইসিসিআর এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ১০ম আন্তর্জাতিক গান ও নৃত্য উৎসবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। দুই দিনের এই উৎসবে ভারত ছাড়াও রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া, উগান্ডা, কিরঘিজস্তান সহ ১১টি দেশের ১৩টি দল অংশ নিয়েছে।
বাংলাদেশের ছয় সদস্যের এই দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপিকা র্যাচেল প্রিয়াঙ্কা পার্সিজ। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন মৌসুমী, লাবনী, রাইসা ও পিংকি। প্রিয়াঙ্কা জানান, “১৪৪ বছরের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত মহাকুম্ভে অংশগ্রহণ আমাদের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। ভারতীয় দূতাবাসের আমন্ত্রণেই আমরা এসেছি, আর ভিসা পেতে কোনও সমস্যাও হয়নি।” আইসিসিআর সূত্রে জানা গেছে, এই শিল্পীদের ফ্লাইট টিকিট এবং যাতায়াতের সমস্ত ব্যয় বহন করেছে বাংলাদেশের ইউনূস সরকার।
আজকের অনুষ্ঠানে দক্ষিণ আফ্রিকা, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ ও ফিজি সহ আরও কয়েকটি দেশ অংশ নেবে। কুম্ভমেলার বিভিন্ন ব্যানার, হোর্ডিং ও বিজ্ঞাপনে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের পতাকা ব্যবহারের ফলে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। বিশেষত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হিংসা, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চলমান অত্যাচারের বিষয়টি মাথায় রেখে এই আমন্ত্রণ কতটা যুক্তিসঙ্গত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জানা গেছে, ইউনূস সরকারের আমলে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে, বহু মন্দির ও দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, এমনকি বিনা বিচারে হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়স্বামীও কারাবন্দি রয়েছেন।
এমন এক সময়ে বাংলাদেশের শিল্পীদের মহাকুম্ভের মতো বিশাল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো কি ভারতের ‘সহনশীলতার ট্রেডমার্ক’ প্রতিফলিত করে? নাকি এটি শুধুই দুই দেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্কের একটি অংশ? আইসিসিআর-এর প্রধান কে. এন. নন্দিনী শ্রীংলা জানান, “এটি ভারত-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তির অংশ। দিল্লির বাইরে এমন উদ্যোগ এই প্রথম।”
তবে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এই আমন্ত্রণ কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। মহাকুম্ভের মতো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহোৎসবে এমন বিতর্ক আরও দীর্ঘায়িত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল শনিবার মহাকুম্ভের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ৬ সদস্যের বাংলাদেশের গৌড়ীয় নৃত্যশিল্পীদের অংশগ্রহণ সাড়া ফেলেছে। বাংলাদেশে বিরাজমান ভারত বিদ্বেষের মাঝে এটিকে অনেকেই ভারতের প্রতি সেদেশের বন্ধুত্বের বার্তা হিসেবে দেখছেন। আইসিসিআর ও উত্তরপ্রদেশ সরকারের আমন্ত্রণে তারা মহাকুম্ভের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।