মহাকাশে নিজস্ব স্পেস স্টেশন স্থাপন করতে যাচ্ছে ভারত।

মহাকাশে নতুন মাইলফলক ভারতের!

ভারত নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো।

বিশ্বের মাত্র তিনটি দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন বর্তমানে মহাকাশে নিজস্ব স্পেস স্টেশন পরিচালনা করে। এবার চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারতও মহাকাশে নিজস্ব স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) এই লক্ষ্য অর্জনের পথে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। গত বৃহস্পতিবার ইসরো সফলভাবে ‘টার্গেট’ এবং ‘চেজার’ নামে দুটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে।

সকালে শ্রীহরিকোটা লঞ্চপ্যাড থেকে প্রেরিত একটি বিশেষ রকেটের মাধ্যমে স্যাটেলাইট দুটি মহাকাশে পাঠানো হয়। প্রতিটির ওজন ২২০ কেজি, এবং সেগুলো মহাকাশে একসঙ্গে পরিচালিত হবে। ইসরোর কর্মকর্তাদের মতে, এই স্যাটেলাইটগুলোকে ‘স্পেস ডকিং এক্সপেরিমেন্ট’ (স্পেডেক্স) প্রকল্পের আওতায় ব্যবহার করা হবে।

ইসরোর মহাকাশবিজ্ঞানী জয়ন্ত মূর্তি বলেছেন, “চাঁদে অভিযানের মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষী মিশন সফল করতে এবং মহাকাশ গবেষণায় আরও উন্নতি আনতে ভারতের নিজস্ব স্পেস স্টেশন স্থাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই প্রকল্পটি আমাদের ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করবে।”

স্পেডেক্স পরীক্ষার উদ্দেশ্য মহাকাশে দুই স্যাটেলাইটকে একক সত্তা হিসেবে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করা। বিশেষ করে, পৃথিবীর অক্ষপথে এই স্যাটেলাইটগুলো সফলভাবে স্থাপন এবং পরিচালনার মধ্য দিয়ে প্রযুক্তির সম্ভাবনা যাচাই করা হবে।

ইসরো সূত্রে জানা গেছে, স্যাটেলাইটগুলোর একটি বিশেষ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে মহাশূন্যের মাইক্রো গ্র্যাভিটির প্রভাব পরীক্ষা করা হবে। স্যাটেলাইটের ভেতরে মাটি ও বিভিন্ন বীজ রাখা হয়েছে, যা অঙ্কুরোদগমের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করবে।

এ প্রকল্পের ঘোষণা ইসরো প্রথম দিয়েছিল গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বেশ কয়েকবার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। প্রথম দুই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও তৃতীয় প্রচেষ্টায় সফল হয় ইসরো। এই সাফল্য ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে একটি বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইটবার্তায় বলেন, “আজকের সাফল্য আমাদের মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায়। আমরা গর্বিত।”

ইসরো ইতিমধ্যেই মহাকাশ গবেষণায় কয়েকটি যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে ‘চন্দ্রযান ৩’ অভিযানের মাধ্যমে চাঁদে সফল অবতরণ ঘটিয়েছিল ভারত। একই বছরের সেপ্টেম্বরে সূর্য অধ্যয়নের জন্য ‘আদিত্য-এল ১’ মিশন সফলভাবে পরিচালনা করে।

মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে ভারতের এই অগ্রযাত্রা শুধু প্রযুক্তিগত সক্ষমতাই নয়, বরং বৈশ্বিক ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থানকেও আরও সুসংহত করেছে। মহাকাশে নিজস্ব স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে ভারত ভবিষ্যতে মহাকাশবিজ্ঞানে নতুন নতুন মাইলফলক স্থাপন করবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী।

Exit mobile version