ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও সামরিক শক্তির ভারসাম্য দীর্ঘদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সামরিক সরঞ্জাম ও যুদ্ধবিমান আধুনিকীকরণের দৌড়ে ভারত বরাবরই এগিয়ে থাকলেও পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কাছ থেকে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর ইয়ালেহাঙ্কা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে অনুষ্ঠিত ‘অ্যারো ইন্ডিয়া ২০২৫’-এ আমেরিকা দু’টি এফ-৩৫ পাঠায়। এর পরেই প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এফ-৩৫ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এর পরেই এবিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, ভারতে পরিকল্পিতভাবে উন্নত সামরিক প্রযুক্তির হস্তান্তর এই অঞ্চলে সামরিক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করবে এবং কৌশলগত স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে। আমেরিকার সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ রাডারের নজর এড়িয়ে শত্রুপক্ষের এলাকায় ঢুকে নজরদারি ও হামলা চালানোর ক্ষমতা রাখে। পাকিস্তান ইতিমধ্যেই আমেরিকা থেকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পেয়েছে, তবে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এফ-৩৫ তার তুলনায় অনেক উন্নত।
হোয়াইট হাউসে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প শুধুমাত্র এফ-৩৫ নয়, অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম যেমন ‘স্ট্রাইকার’ ইনফ্র্যান্ট্রি কমব্যাট ভেহিকল্, ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ‘জ্যাভেলিন’, এবং জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ‘হার্পুন’-এর বিষয়েও আলোচনা করেন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে ইসলামাবাদ উদ্বিগ্ন, কারণ এটি দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক ভারসাম্য বদলে দিতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের বায়ুসেনা এতদিন রাশিয়ার তৈরি মিগ-২১, মিগ-২৭, মিগ-২৯ এবং সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে। আমেরিকার যুদ্ধবিমান ব্যবহারের অভিজ্ঞতা ভারতের নেই। তবে উৎকর্ষের বিচারে এফ-৩৫ অনেক এগিয়ে। এই যুদ্ধবিমান তিনটি ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যায় এফ-৩৫এ, এফ-৩৫বি এবং এফ-৩৫সি। এফ-৩৫এ এর একটির দাম ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ভারতীয় মুদ্রায় ৬৯৩ কোটি রুপির বেশি , এফ-৩৫বি-এর দাম ১১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা প্রায় ৯৯৭ কোটি রুপি, এবং এফ-৩৫সি এর দাম ১১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৯৫৩ কোটি রুপির বেশি।
অপরদিকে বর্তমানে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী প্রধানত চীন, আমেরিকা ও নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে। পাকিস্তানের সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধবিমান হলো F-16 ফাইটিং ফ্যালকন, যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হয়েছে। তবে চীনের সহযোগিতায় তৈরি JF-17 থান্ডার এবং রাশিয়ান MiG-21 এর অনুকরণে তৈরি F-7 এর মতো বিমানও পাকিস্তান ব্যবহার করে।
F-35 হাতে আসলে ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রথমবারের মতো সত্যিকারের স্টেলথ যুদ্ধবিমান পাবে। এটি এয়ার-টু-এয়ার, এয়ার-টু-গ্রাউন্ড, এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার-এ দক্ষ। পাকিস্তানের F-16 ও JF-17 সহজেই এটি ধরতে পারবে না। F-35 ভারতের বিমানবাহিনীকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। পাকিস্তানের F-16 ও JF-17 এই যুদ্ধবিমানকে সহজেই টেক্কা দিতে পারবে না। তাই ভারত F-35 সংগ্রহ করলে উপমহাদেশের সামরিক ভারসাম্য ভারতের দিকেই ঝুঁকে যাবে, যা পাকিস্তানের জন্য সত্যিই উদ্বেগজনক হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের হাতে এফ-৩৫ এলে আকাশযুদ্ধে ভারতের শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি, আমেরিকা ও ভারতের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। পাকিস্তান এই বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করলেও আমেরিকার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিক্রিয়া এখনো আসেনি।